‘কাউকে পরোয়া করিনি, আজো করি না’
‘স্বপ্ন দেখ, ওটাই অক্সিজেন।’ বর্তমান সময়ের তরুণদের এমনটাই বার্তা দিলেন দুই বাংলার জনপ্রিয় গায়ক নচিকেতা চট্টোপাধ্যায়। সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমের কাছে খোলামেলা আলাপচারিতায় নচিকেতা বললেন, ‘সঠিক লাইন বুঝলে সাফল্য এখন খুব তাড়াতাড়িই পাওয়া যায়। বুকে স্বপ্ন নিয়ে সাফল্যের ঠিকঠাক পথ ধরে এগিয়ে যেতে পারলে সাফল্য পাওয়া আজকের দিনে কঠিন কিছু নয়। চারিদিকে এত রিয়্যালিটি শো হচ্ছে, দ্রুত, রাতারাতি নাম করে ফেলছে অনেকে। সবাই মুখ চিনে যাচ্ছে। এটার যেমন ভালো দিক আছে, তেমনি উলটো দিকও আছে। কেউ সাকসেসফুল হচ্ছে, আবার কেউ হারিয়ে যাচ্ছে। কিন্ত আমি মনে করি, নিজে স্ট্রাগল করে উঠলে একটা জায়গা তৈরি হয়।’
বর্তমান সময়ে ফাংশন বা অ্যালবাম বিক্রির হার কমে গেলেও গায়কদের না খেতে পেরে মরার মতো অবস্থা কোনোভাবেই তৈরি হয়নি বলে আজো মনে করেন নচিকেতা। জানিয়ে দিলেন, ‘বর্তমান সময়ে এটা ঠিক যে, অ্যালবাম বিক্রির টাকায় সংসার চলবে, রয়্যালিটি পাব—সে দিন আর নেই। তবে শহরের বুকে ফাংশন কমে গেলেও শহরের বাইরে ফাংশনের পরম্পরা আজো বজায় আছে। যেখানে আগে আমাকে ১৫০ রুপি হাতে গুঁজে দিয়ে মাচায় গান গাইয়েছে সেখানে এখন ৫০০০ রুপি ধরিয়ে দিয়ে গান গাওয়ায়। ফলে না খেতে পেয়ে মরার মতো অবস্থা গায়কদের এখনো আসেনি। তবে ট্রেন্ডটা বদলেছে।’
লোকে বলে, নচিকেতা ঠোঁটকাটা। এই প্রসঙ্গে নচিকেতা সাফ সাফ জানিয়ে দিলেন, ‘ঠোঁটকাটা বলে আমার দুর্নাম আছে। কিন্ত তাতে আমার কিছু যায় আসে না। আমি সেই আগের মতোই আছি। নয়ের দশকের প্রথম দিকে যখন আমি স্ট্রাগলার, কলেজে ফাংশনে, তক্তাপোশের মাচার ফাংশনে গান গাইছি—কজখনো আপস করিনি। সত্যি বলার সাহস ছিল। ওটাই নচিকেতার ব্র্যান্ডিং। কাউকে পরোয়া করিনি, আজো করি না। হিপোক্রেসি দেখলেই মাথায় আগুন জ্বলে যেত, আজো যায়। নচিকেতা আজ জীবনে সফল, অনেক কিছু পেয়েছে। পুরস্কার, নাম-ডাক, টাকা-পয়সা, সম্মান, অসংখ্য ফ্যান। কিন্ত আমি সেই আগের মতোই আছি।’
ঠোঁটকাটা হওয়ার জন্য জীবনে অনেক কিছু থেকে বঞ্চিত হয়েছেন এমনটা আদৌ মনে করেন না নচিকেতা। উলটো বললেন, ‘আমি আমার মতো আছি বলেই নচিকেতাকে সবাই ভালোবাসে। পরিবর্তনের আগুন রাস্তায় আমি পথ চলেছি। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে গোটা বাংলাকে বদলে দিচ্ছেন, সেই পরিবর্তনের সাথী হয়েছি আমি। বুঝতে পেরেছিলাম উনি সত্যের পথে হাঁটছেন। লড়াইটা কঠিন ছিল, কিন্ত জয় অনিবার্য। আসলে মানুষকে বোকা বানানো সহজ নয়। আমি যদি মানুষকে বোকা বানাতে নিজে মুখোশ পরে থাকতাম, তাহলে একদিন মানুষ আমাকে ছুঁড়ে ফেলে দিত। আজো যখন আমি স্বমহিমায় সবার মধ্যে বিরাজ করছি, তার মানে আমি ঠিক পথেই হাঁটছি।’
দীর্ঘ সংগীত জীবনের পাশাপাশি গানের সঙ্গে সঙ্গে সিনেমায় অদ্ভুত এক চরিত্রে অভিনয়ে নামছেন নচিকেতা। ‘৬১ গড়পার লেন’ নামে একটি বাংলা ছবিতে ফুচকাওয়ালা সেজে গান গাওয়ার চরিত্রে দেখা যাবে এবারে নচিকেতাকে। সেই প্রসঙ্গে জানালেন, ‘আমার জীবনের সঙ্গে ভীষণ নস্টালজিক লেগেছিল ছবির গল্পটা। তাই এক কথাতেই রাজি হয়ে গেলাম।’
বর্তমান সময়ের বাংলা ছবি প্রসঙ্গে নচিকেতা বলেন, ‘বেশির ভাগ বাংলা ছবিতে এখন কম খাটনিতে পাবলিক ধরার এক খেলা চলছে। কোনো সাবজেক্ট নেই, তো লাগিয়ে দে পরকীয়ার ছবি। হাতে ভালো গল্প নেই তো, লেসবিয়ানদের ছবি বানিয়ে দাও। পাবলিককে কম ভাবাও, নিজেরাও কম ভাব। এই খেলাটা চলছে। সেখানে দাঁড়িয়ে এই গল্পটা কিছুটা অন্য রকম মনে হওয়ায় ছবিতে অভিনয় করতে রাজি হয়ে গেলাম।’

মনোজ বসু, কলকাতা