ডায়াবেটিক রোগীদের খাওয়ার সঠিক সময়
খাবারের ক্ষেত্রে ডায়াবেটিক রোগীদের বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। আর ডায়েট নিয়ে অনেকেই চিন্তিত। এ বিষয়ে আজ আমরা জানব বিশেষজ্ঞ পুষ্টিবিদের কাছ থেকে।
এনটিভির নিয়মিত এক স্বাস্থ্যবিষয়ক অনুষ্ঠানে ডায়াবেটিক রোগীর ডায়েট নিয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন পুষ্টিবিদ তামান্না চৌধুরী। তিনি বলেন, ডায়াবেটিস হলে সবারই কিন্তু ধারণা, বিশেষ করে কার্বোহাইড্রেটটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। কারণ, এটা যেহেতু রক্তের শর্করার সঙ্গে সম্পর্কিত একটি রোগ এবং মেটাবলিক একটি ডিজিজ, তাই আমাদের সবারই ভাবনা হচ্ছে কীভাবে ব্লাড সুগারকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। কিন্তু অনেক রোগীরই এ সম্পর্কে ধারণা নেই যে ডায়াবেটিসের ডায়েট মেইনটেইন করলে খুব সহজেই ডায়াবেটিকজনিত জটিলতাগুলো থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে পারবেন।
পুষ্টিবিদ তামান্না চৌধুরীর পরামর্শ, যাঁরা ডায়াবেটিক রোগী আছেন, তাঁদের সময় মেইনটেইন করতে হবে। আমি সব সময় আমার রোগীদের বলে থাকি, ডায়াবেটিস মানেই হচ্ছে, এটি একটি ক্লক ডিজিজ। আপনি যদি ঘড়ির কাঁটার সঙ্গে নিজের খাবারগুলোকে মেনে চলতে পারেন, সে ক্ষেত্রে অনেক সহসাই ব্লাড সুগারকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। কিন্তু অনেকের একটি ভুল ধারণা হচ্ছে, শুধু ভাত আর রুটি কম খেলেই মনে হয় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে। এটি কোনো কোনো ক্ষেত্রে কিন্তু অনেক জটিলতাও তৈরি করতে পারে। তাই রক্তের শর্করাকে সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণের জন্য সকালের খাবারকে আপনি অবশ্যই ৮টা থেকে সাড়ে ৮টার মধ্যে শেষ করে ফেলবেন। অবশ্যই আপনাকে সাড়ে ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে মধ্য-সকালের খাবার খেতে হবে এবং দুপুরের খাবারটি আপনি চেষ্টা করবেন দেড়টা থেকে ২টার মধ্যে শেষ করতে। অবশ্যই ভুলবেন না ৪টা থেকে ৫টার মধ্যে হালকা খাবার নিতে। ডিনারের ব্যাপারটিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেবেন। কারণ, আপনার ডিনারের টাইমিং যদি ঠিক না থাকে, এ ক্ষেত্রে কিন্তু ফাস্টিং ব্লাড সুগার যেটা বলি আমরা, সেটা অনেক বেড়ে যেতে পারে। এই ফাস্টিং ব্লাড সুগারই কিন্তু আমাদের সারা দিনের সুগার অর্থাৎ র্যানডম সুগারটিকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। সে জন্য ডিনারটি অবশ্যই আপনি ৮টা থেকে সাড়ে ৮টার মধ্যে সেরে ফেলবেন। অবশ্যই ভুলবেন না, রাতে শোয়ার আগে অর্থাৎ ১০টা থেকে সাড়ে ১০টার মধ্যে আরেকটি খাবার নিতে।
পুষ্টিবিদ তামান্না চৌধুরী আরো বলেন, যাঁরা ইনসুলিন নেন, তাঁদের জন্য এই খাবারটি অনেক বেশি জরুরি। কারণ, যাঁরা ইনসুলিন নিচ্ছেন, তাঁদের কিন্তু অনেক সম্ভাবনা থাকে মধ্যরাতে অর্থাৎ রাত ২টা থেকে ৩টার দিকে বা ভোরের দিকে হঠাৎ করে হাইটুটলাইসেমিয়া হয়ে যাওয়ার, যেটি খুবই মারাত্মক এবং ঝুঁকিপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে আমরা শোওয়ার আগে যে পরামর্শ দিয়ে থাকি রোগীকে, দুধ বা দুধজাতীয় কোনো খাবার; যেমন সেটা টক দই হতে পারে। সুতরাং, ডায়াবেটিস রোগীদের আমি যেটা বলতে চাই, খাবার শুধু নিয়ন্ত্রণ নয়, মিষ্টি খাবার এড়িয়ে চললেই শুধু হবে না, ডায়াবেটিসকে সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হলে আপনাকে খাবারের সময়টাকে অবশ্যই মেনে চলতে হবে। অর্থাৎ ডিসিপ্লিন ছাড়া কখনোই ডায়েট প্রপার ওয়েতে মানলেও সেটা আপনার কাজে লাগবে না। ডায়াবেটিসের প্রথম রুলসই হচ্ছে ডিসিপ্লিন ও ডায়েট। যখন আপনি এটা মেনে চলতে সক্ষম হবেন, তখন অবশ্যই আপনি ওষুধ বা ইনসুলিনকে এড়িয়ে চলতে পারবেন। আর যখন ডায়েট ও ডিসিপ্লিন আপনাকে সাহায্য করতে পারছে না, তখন হয়তো আপনার মেডিসিন বা ইনসুলিনের প্রয়োজন হবে। সুতরাং আপনার খাবারটিকে কমিয়ে না, নির্দিষ্ট ভাগে ভাগ করে সারা দিন একটি ব্যালেন্স নিউট্রিশনের মাধ্যমে ডায়াবেটিসকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করবেন।