ইয়ানসেনের তোপে বিধ্বস্ত ভারত
ব্যাটহাতে প্রথম সেঞ্চুরি পাওয়ার কাছাকাছি গিয়েছিলেন মার্কো ইয়ানসেন। তবে ফিরলেন সেঞ্চুরি মিসের হতাশা নিয়ে। সেই হতাশা কিছুটা পূরণ করলেন বল হাতে। ভারতকে যে তিনি একাই গুঁড়িয়ে দিলেন। তার পেস আগুনে পুড়ে দিশেহারা হয়েছেন ভারতীয় ব্যাটাররা। ব্যাটিং ব্যর্থতায় বিধ্বস্ত ভারত ঘরের মাঠে ফলো-অনের লজ্জাও পেয়েছিল। তবে সেটি না করে আবারও ব্যাট করছে দক্ষিণ আফ্রিকা।
আজ সোমবার (২৪ নভেম্বর) টেস্টের তৃতীয় দিন শেষে ৩১৪ রানের লিড পেয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রথম ইনিংসে ৪৮৯ রান করেছিল প্রোটিয়ারা। জবাব দিতে নেমে ২০১ রানেই গুটিয়ে গেছে ভারত। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে কোনো উইকেট না হারিয়ে ২৬ রান তুলেছে প্রোটিয়ারা। অপরাজিত আছেন রায়ান রিকেলটন ১৩ ও এইডেন মার্করাম ১২ রানে।
দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে ব্যাট-বল দুই বিভাগেই আস্থার প্রতীক হিসেবে দেখা দিয়েছেন মার্কো ইয়ানসেন। বলহাতে আলো ছড়ানোর পাশাপাশি ব্যাট হাতেও দায়িত্ব নেন তিনি৷ ভারতের বিপক্ষে এই ম্যাচ দিয়ে ক্যারিয়ারে প্রথমবার সেঞ্চুরির আশা দেখালেও সেটিকে পূর্ণতা দিতে পারেননি। ফেরেন ৯৩ রানে।
সেই হতাশা কিছুটা মেটান স্বাগতিকদের ব্যাটিংয়ে ধস নামিয়ে। ৪৮ রান খরচায় ৬ উইকেট শিকার করেন ইয়ানসেন। নাম লেখান রেকর্ড বইয়েও। ভারতে দক্ষিণ আফ্রিকার পেসারদের মধ্যে তৃতীয় সেরা বোলিং ফিগার এটি। ইয়ানসেনকে সঙ্গ দিয়েছেন স্পিনার হার্মার। ৬৪ রান দিয়ে তার শিকার ৩ উইকেট।
ভারতের শুরুটা অবশ্য মন্দ ছিল না। উদ্বোধনী জুটিতে ৬৫ রান তুলেছিলেন জয়স্বী জয়সওয়া আর কেএল রাহুল। ২ চারে ২২ রান করা রাহুলকে ফিরিয়ে সেই জুটি ভাঙেন কেশব মহারাজ। একপ্রান্ত আগলে রেখে দ্রুত রান বাড়ান জয়সওয়াল। হাফসেঞ্চুরিও তুলে নেন তিনি। এরপর অবশ্য আর ইনিংস বড় করতে পারেননি তিনি। হার্মারের বলে শর্ট থার্ডম্যানে ধরা পড়েন এই ভারতীয় ওপেনার। পরের ওভারে হার্মার ফেরান সাই সুদর্শনকে।
এরপর বাকি কাজটা করেন ইয়ানসেন। তার বোলিংয়ের সামনে আর কোমড় সোজা করে দাঁড়াতে পারেননি ভারতীয় ব্যাটাররা। ইয়ানসেন ঝড় শুরু হয় ধ্রব জুরেলকে দিয়ে। শূন্য রানেই ভারতের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ককে বিদায় করেন ইয়ানসেন। এরপর খুব বেশি দেরি হয়নি কিছুক্ষণ পর নিতিশ কুমার রেড্ডি ও রাভিন্দ্রা জাদেজাকেও ফিরিয়ে দেন ইয়ানসেন।
৫৭ রান তুলতেই ৭ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে যায় ভারত। সেখান থেকে দলকে টেনে তোলার চেষ্টা করেন ওয়াশিংটন সুন্দর ও কুলদিপ যাদব। এই দুইজনের জুটি থেকে আসে ৭২ রান। যা ইনিংসের সর্বোচ্চ রানের জুটি। হার্মারের বলে ওয়াশিংটন স্লিপে ধরা পড়লে ভাঙে এই জুটি।
পরের ওভারে কুলদীপকেও ফিরিয়ে দেন ইয়ানসেন। ১৩৪ বল খেলে ৩টি চারে মোটে ১৯ রান করেন কুলদীপ। তাকে ফিরিয়ে টেস্ট ক্যারিয়ারে চতুর্থবার ফাইফার তুলে নেন ইয়ানসেন। পরের ওভারে জাসপ্রিত বুমরাহকে কট বিহাইন্ড করে ভারতের ইনিংস গুটিয়ে দেন তিনি।
ফলো-অনে পড়ে আউট হয়ে যায় ভারত। তবে তাদের ফলোঅন না করিয়ে শেষ বিকেলে আবারও ব্যাটিংয়ে নামে দক্ষিণ আফ্রিকা। ৮ ওভার ব্যাটিং করে ভারতকে হতাশ করেই দিন পার করে দেন দুই ওপেনার রায়ান রিকেলটন ও এইডেন মার্করাম।
তৃতীয় দিন শেষে সংক্ষিপ্ত স্কোর
দক্ষিণ আফ্রিকা ১ম ইনিংস : ৪৮৯
ভারত ১ম ইনিংস : ৮৩.৫ ওভারে ২০১ (আগের দিন ৯/০) (জয়সওয়াল ৫৮, রাহুল ২২, সুদার্শান ১৫, জুরেল ০, পান্ত ৭, জাদেজা ৬, নিতিশ ১০, ওয়াশিংটন ৪৮, কুলদিপ ১৯, বুমরাহ ৫, সিরাজ ২*; ইয়ানসেন ১৯.৫-৫-৪৮-৬, মুল্ডার ১০-৫-১৪-০, মহারাজ ১৫-১-৩৯-১, হার্মার ২৭-৬-৬৪-৩, মার্করাম ১০-১-২৬-০, মুথুসামি ২-০-২-০)
দক্ষিণ আফ্রিকা ২য় ইনিংস : ৮ ওভারে ২৬/০ (রিকেলটন ১৩*, মার্করাম ১২*; বুমরাহ ৩-০-১৩-০, সিরাজ ৩-১-৮-০, জাদেজা ১-০-২-০, কুলদিপ ১-০-২-০)

স্পোর্টস ডেস্ক