লক্ষ্য ‘চতুর্থ শিরোপা’, কতটা প্রস্তুত ঢাকা?
বিপিএলের ইতিহাসের পাতায় চোখ বোলালে ঢাকার নামটা ওপরের দিকেই থাকবে। টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তিনবারের চ্যাম্পিয়ন তারা। কিন্তু মুদ্রার উল্টোপিঠও দেখতে হয়েছে দলটিকে। গত কয়েক আসরে সাফল্য তো দূরের কথা, মাঠের পারফরম্যান্স আর মাঠের বাইরের নানা ইস্যুতে সমালোচনার জন্ম দিয়েছে রাজধানীর দলটি।
তবে গত আসরে ঢাকার সমর্থকদের জন্য আশার বাতিঘর হয়ে এসেছিলেন ঢালিউড সুপারস্টার শাকিব খান। ক্রিকেট আর বিনোদন জগতের মেলবন্ধনে ঢাকা ক্যাপিটালসের মালিকানায় আসে নতুনত্ব। অভিষেক আসরটা রঙিন না হলেও, শাকিব খান কথা দিয়েছিলেন—‘আরও শক্তিশালী হয়ে ফিরব আমরা।’ নিলামের টেবিলে অন্তত সেই কথার প্রতিফলন ঘটিয়েছে ঢাকা ক্যাপিটালস। দেশি অভিজ্ঞতার সঙ্গে বিদেশি বারুদ—দুইয়ের সংমিশ্রণে তাদের লক্ষ্য এবার একটাই—হারানো শিরোপা পুনরুদ্ধার।
নিলামের টেবিলে বসার আগেই নিজেদের রণকৌশল পরিষ্কার করে দিয়েছিল ঢাকা। সরাসরি চুক্তিতে তারা দলে ভেড়ায় বিধ্বংসী ইংলিশ ওপেনার অ্যালেক্স হেলস, পাকিস্তানের টপঅর্ডার ব্যাটার উসমান খান এবং দারুণ ফর্মে থাকা ওপেনার সাইফ হাসান। যেকোনো প্রতিপক্ষের বোলিং লাইনআপ চুরমার করে দেওয়ার জন্য এই নামগুলোই যথেষ্ট। তাদের সঙ্গী পেস সেনসেশন তাসকিন আহমেদকে।
বিপিএলের মাঝপথে পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের চলে যাওয়ার শঙ্কা বা আইএল টি-টোয়েন্টির ব্যস্ততা—সব সমীকরণ মাথায় রেখেই স্কোয়াড সাজিয়েছে ঢাকা। ব্যাটিংয়ে গভীরতা বাড়াতে আফগান দুর্গ থেকে উড়িয়ে আনা হয়েছে টি-টোয়েন্টির ফেরিওয়ালা রহমানুল্লাহ গুরবাজকে। হেলস, গুরবাজ, উসমান আর সাইফ হাসান—কাগজে-কলমে যাকে বলা যায় ‘টপনচ’ ব্যাটিং লাইনআপ। মিডল অর্ডারে ঝড় তুলতে প্রস্তুত দাসুন শানাকা, আর ফিনিশিং রোলে শামীম হোসেন পাটোয়ারী, সাইফউদ্দিনরা।
টপঅর্ডার ঠিকঠাক করে নিলামে ঢাকার নজর ছিল মিডল অর্ডার আর বোলিংয়ের শক্তি বাড়ানো। সেই পরিকল্পনায়ও বেশ সফল ক্যাপিটালসরা। মিডল অর্ডারে মোহাম্মদ মিঠুন, সাব্বির রহমান, ইরফান শুক্কুর, নাসির হোসেন, দাসুন শানাকারা ঢাকার দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত। ঢাকার টপঅর্ডারের ব্যাকআপ আফগান জুবাইরউল্লাহ আকবরী।
নিলামের পর বোলিং বিভাগ নিয়ে কিছুটা প্রশ্ন থাকলেও, পরবর্তীতে তা বেশ ভালোভাবেই পুষিয়ে নিয়েছে ম্যানেজমেন্ট। পেস ইউনিটে তাসকিন আহমেদের যোগ্য সঙ্গী হতে পারেন আফগান পেসার জিয়াউর রহমান শরিফি, ওডিন স্মিথ মারুফ মৃধা কিংবা তোফায়েল আহমেদরা। অন্যদিকে স্পিন বিভাগে অভিজ্ঞতাই ঢাকার বড় শক্তি। অটোমেটিক চয়েস হিসেবে থাকছেন দেশসেরা স্পিনার তাইজুল ইসলাম এবং পাকিস্তানের অলরাউন্ডার ইমাদ ওয়াসিম। সুইডিশ স্পিনার চৌধুরী শের আলীও হতে পারেন সারপ্রাইজ প্যাকেজ।
আধুনিক টি-টোয়েন্টিতে অলরাউন্ডাররাই ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দেন। সেই জায়গায় বেশ সমৃদ্ধ ঢাকা। মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ও দাসুন শানাকা বাংলাদেশের কন্ডিশনে অত্যন্ত কার্যকর। এছাড়া নাসির হোসেন, শামীম হোসেন পাটোয়ারী কিংবা সাইফ হাসান—প্রত্যেকেই বল হাতে অবদান রাখতে পারেন। অধিনায়কের জন্য বোলিং রোটেশনে এটি বাড়তি সুবিধা যোগ করবে।
আইএল টি-টোয়েন্টির কারণে গুরবাজ আর শানাকা হয়ত দলের সঙ্গে যোগ দেবেন কিছুটা পরে। তাই শুরুর দিকে ঢাকার ওপেনিং জুটিতে দেখা যাবে অ্যালেক্স হেলস আর উসমান খানকে। তিন নম্বর পজিশন হবে সাইফ হাসানের। অথবা পজিশন অদল-বদল করা হতে পারে তাদের মধ্যে।
অধিনায়ক হওয়ায় মোহাম্মদ মিঠুনের একাদশে থাকা নিশ্চিত। চার নম্বর পজিশনে দেখা যেতে পারে তাকে। পাঁচ নম্বরে লড়াইটা দুজনের মধ্যে- সাব্বির রহমান কিংবা নাসির হোসের মধ্যে একজনকে দেখা যেতে পারে একাদশে।
ছয় নম্বরে ফিনিশিং রোল প্লে করবেন শামীম হোসেন পাটোয়ারী। সাত নম্বরে অলরাউন্ডার হিসেবে খেলবেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। তাসকিন আহমেদের উপর থাকবে পেস ইউনিটের মূল দায়িত্ব। স্পেশালিস্ট স্পিনার হিসেবে তাইজুল ইসলাম আর ইমাদ ওয়াসিমের একাদশে থাকাটা মোটমুটি নিশ্চিতই বলা যায়।
যদি ঢাকা তিন পেসার নিয়ে মাঠে নামতে চায় সেক্ষেত্রে তাইজুল ইসলাম কিংবা ইমাদ ওয়াসিমের মধ্যে একজনকে বেঞ্চে বসতে হতে পারে। সুযোগ পেতে পারেন মারুফ মৃধা কিংবা জিয়াউর রহমান শরিফির একজন। অথবা স্পেশালিস্ট পাঁচ বোলারকে নিয়ে যদি একাদশ সাজায় ঢাকা, তাহলে কপাল পুড়বে সাব্বির-নাসিরদের।
সলিড ব্যাটিং আর কার্যকর অলরাউন্ডারদের নিয়ে গড়া এই ঢাকা ক্যাপিটালসকে শিরোপার দৌঁড়ে সবার ওপরে না রাখলেও, শুরুর দিকেই রাখতে হবে। টপঅর্ডারে হেলস-উসমান-সাইফ-গুরবাজদের বারুদ আর তাসকিনের গতি—শিরোপার লড়াইয়ে পথ বাতলে দেবে ঢাকা ক্যাপিটালসকে। এখন শুধু মাঠের পারফরম্যান্সে সেই বারুদের বিস্ফোরণ ঘটানোর অপেক্ষা।
ঢাকা ক্যাপিটালসের স্কোয়াড
দেশি ক্রিকেটার : মোহাম্মদ মিঠুন (অধিনায়ক), তাসকিন আহমেদ, সাইফ হাসান, শামীম হোসেন পাটোয়ারী, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, তাইজুল ইসলাম, সাব্বির রহমান, নাসির হোসেন, তোফায়েল আহমেদ, ইরফান শুক্কুর, আব্দুল্লাহ আল মামুন, মারুফ মৃধা, জায়েদ উল্লাহ, মইনুল ইসলাম।
বিদেশি ক্রিকেটার : উসমান খান, অ্যালেক্স হেলস, দাসুন শানাকা, রহমানুল্লাহ গুরবাজ, জুবাইরউল্লাহ আকবরী, ইমাদ ওয়াসিম, ওডিন স্মিথ, জিয়াউর রহমান শরিফি, চৌধুরী শের আলী, মোহাম্মদ আরিফ হোসেন।

নাজমুল সাগর