বিপিএলে নতুনের কেতন, নোয়াখালীর বাজি ‘তারুণ্য’
নোয়াখালীবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন অবশেষে বাস্তবে রূপ নিয়েছে। নতুনের কেতন উড়িয়ে ‘নোয়াখালী এক্সপ্রেস’ নামে বিপিএলের আঙিনায় নোঙর ফেলেছে নবাগত এই ফ্র্যাঞ্চাইজি। প্রথমবার বিপিএলে গতিময় ছন্দ উপহার দিতে ঠিক কতটা প্রস্তুত নবাগত দলটি? শক্তি বা দুর্বলতাই কোথায় কোথায়? বৃহত্তর নোয়াখালীবাসীর স্বপ্নের যাত্রার বিশ্লেষণ তুলে ধরা হলো এনটিভির পাঠকদের জন্য।
এবারের বিপিএল আয়োজন করার কথা ছিল পাঁচটি দল নিয়ে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে দল বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। কপাল খুলে যায় নোয়াখালীর, তাদের মালিকানা দেওয়া হয় দেশ ট্রাভেলসকে। কোচ খালেদ মাহমুদ সুজনের নেতৃত্বে বড় নামের পেছনে না ছুটে, সাম্প্রতিক ফর্ম ও তারুণ্যের ওপরই আস্থা রেখেছে নোয়াখালী।
শেষ বেলায় সুযোগ পেয়ে সরাসরি চুক্তির কোটায় বেশ ভালোই করেছিল নোয়াখালী। নজর ছিল ঠিকঠাক মতো টপঅর্ডার সাজানোর। সেজন্য দলে ভিড়িয়েছিল সৌম্য সরকার, শ্রীলঙ্কান কুশল মেন্ডিস আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের মারকুটে ব্যাটার জনসন চার্লসকে। পেস শক্তি হিসেবে ছিলেন ঘরের ছেলে হাসান মাহমুদ।
তবে নিলাম টেবিলে কিছুটা হতাশই হতে হয়েছিল নোয়াখালীকে। বাধ্য হয়েই ‘এ’ ও ‘বি’ ক্যাটাগরি থেকে দুজন ক্রিকেটারকে দলে ভেড়াতে হয়েছিল তাদের। নিলামে সেই ঘাটতি পুরোপুরি পূরণ করতে পারেনি নোয়াখালী। নিলামের আগেই টপঅর্ডার নিশ্চিত করা দলটি নজর দেয় বোলিং বিভাগে। দেশীয়দের সঙ্গে পাকিস্তানের পেসার ইহসানুল্লাহকে দলে ভিড়িয়ে শক্তি বাড়ায় এই বিভাগের।
নিলাম শেষে সুক্ষ্ম ছক কষেণ নোয়াখালীর প্রধান কোচ খালেদ মাহমুদ সুজন। নজর দেন বিদেশি ক্রিকেটার দিয়ে পিছিয়ে থাকা জায়গাগুলো পূরণ করতে। সেই চিন্তায় সুজনের নজর পড়ে আফগান ভূখণ্ডে। দলে ভেড়ান টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ফেরিওয়ালা আফগান অলরাউন্ডার মোহাম্মদ নবীকে। এরপর দেশটি থেকে আরও তিনজনকে দলে ভেড়ান।
চোটের কারণে বিপিএল খেলা অনিশ্চিত লঙ্কান কুশল মেন্ডিসের। যে কারণে শেষ মুহূর্তে আফগান ওপেনার সেদিকুল্লাহ অটলকে দলে ভিড়িয়েছে নোয়াখালী। সৌম্য সরকার, জনসন চার্লস, সেদিকুল্লাহ অটল, সদ্য সমাপ্ত ইমার্জিং এশিয়া কাপে আলো ছড়ানো হাবিবুর রহমান সোহান ও পাকিস্তানের মাজ সাদাকাতকে নিয়ে গড়া নোয়াখালীর টপঅর্ডার চমক হতে পারে প্রতিপক্ষের জন্য। নোয়াখালীর বড় শক্তির জায়গাও এটি।
মিডল অর্ডার নিয়ে নোয়াখালীর দুঃশ্চিন্তা কাটেনি এখনও। অভিজ্ঞ আফগান অলরাউন্ডার মোহাম্মদ নবী ছাড়া আস্থা রাখার মতো তেমন বড় নাম নেই। পাকিস্তানের হায়দার আলীও নেই সেরা ছন্দে। টাইগার জাকের আলী অনিককে নিয়ে তো সমালোচনার শেষ নেই। সাম্প্রতিক সময়ে ছন্দে থাকা শাহাদাত হোসেন দিপু আশার প্রতীক হতে পারেন নোয়াখালীর জন্য। ফিনিশিংয়ে ভরসা মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন।
বোলিংয়ে কিছুটা ছন্দ খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছেন নোয়াখালীর কোচ সুজন। তবে পেস নির্ভর বোলিং ইউনিট গড়েছে দলটি। নিশ্চিতভাবেই নোয়াখালীর বোলিং বিভাগের দায়িত্ব থাকবে হাসান মাহমুদের ওপর। তার সঙ্গী পাকিস্তানের ইহসানুল্লাহ খান, আফগান বিলাল সামি, আমিরাতের তরুণ ইবরার আহমেদ। দেশিদের মধ্যে মুশফিক হাসান, রেজাউর রহমান রাজা ও মেহেদী হাসান রানারা।
স্পিনে সারপ্রাইজ প্যাকেজ হতে পারেন এনসিএল টি-টোয়েন্টিতে দারুণ পারফর্ম করা বোলার মোহাম্মদ আবু হাসিম। নাজমুল ইসলাম অপুও আছেন এই বিভাগে। লেগস্পিন করতে আনা হয়েছে আফগান জাহির খানকে।
টপঅর্ডার ব্যাটিংয়ে দারুণ নোয়াখালীর মিডলঅর্ডারে কিছুটা খামতি থাকলেও বোলিংয়ে সেটি নেই। টপঅর্ডারে সৌম্য, জনসন চার্লস, সেদিকুল্লাহ, সোহান, মাজ সাদাকাতরা রানের গাড়িতে গতি বাড়ালে বাকি দুর্বলতাগুলো ঢেকে যাবে। এছাড়াও চলমান আইএল টি-টোয়েন্টি শেষে বড় নামের দিকে ছোটার সুযোগও রয়েছে তাদের।
চলমান আইএল টি-টোয়েন্টিতে খেলার কারণে সিলেট পর্বে মোহাম্মদ নবী ও সেদিকুল্লাহ অটলকে নাও পেতে পারে নোয়াখালী। তবে শারজাহ ওয়ারিয়র্স গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নেওয়ায় জনসন চার্লসকে দ্বিতীয় ম্যাচ থেকেই পেতে পারে নোয়াখালী। সিলেট পর্বের শেষ ম্যাচে পেতে পারে আবরার আহমেদকে।
সেই হিসেবে হয়ত শুরুর দিকে নোয়াখালীর হয়ে ওপেনিং করতে আসবেন সৌম্য সরকার আর মাজ সাদাকাত। তিন নম্বরে পাঠানো হতে পারে হাবিবুর রহমান সোহানকে। চার নম্বরে পাঠানো হতে পারে শাহাদাত হোসেন দিপুকে। পাঁচ নম্বরে হায়দার আলীকে দেখা যেতে পারে। ৬ নম্বর পজিশনে লড়াইটা হবে মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন ও জাকের আলি অনিকের।
পেস ইউনিটে নেতৃত্ব দেবেন হাসান মাহমুদ। তার সঙ্গী হতে পারেন ইহসানুল্লাহ খান ও মুশফিক হাসান। উইকেট বিবেচনায় দুই স্পিনার হিসেবে জাহির খান ও নাজমুল ইসলাম অপুকে খেলানো হতে পারে।
নোয়াখালী এক্সপ্রেসের স্কোয়াড
দেশি ক্রিকেটার : সৌম্য সরকার, হাসান মাহমুদ, মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন, জাকের আলী অনিক, হাবিবুর রহমান সোহান, নাজমুল ইসলাম অপু, মোহাম্মদ আবু হাসিম, মুশফিক হাসান, শাহাদাত হোসেন দিপু, রেজাউর রহমান রাজা, মেহেদী হাসান রানা, সৈকত আলী, সাব্বির হোসেন ও রহমতুল্লাহ আলী।
বিদেশি ক্রিকেটার : জনসন চার্লস (ওয়েস্ট ইন্ডিজ), ইহসানুল্লাহ খান (পাকিস্তান), হায়দার আলী (পাকিস্তান), মোহাম্মদ নবী (আফগানিস্তান), মাজ সাদাকাত (পাকিস্তান), জাহির খান (আফগানিস্তান), ইবরার আহমেদ (আরব আমিরাত), বিলাল সামি (আফগানিস্তান), সেদিকুল্লাহ অটল (আফগানিস্তান)।

নাজমুল সাগর