চিকিৎসা শেষে রাশিয়ায় ফিরেই গ্রেপ্তার পুতিনের কট্টর বিরোধী নেতা
রাশিয়ার বিরোধী দলীয় নেতা এবং প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কট্টর সমালোচক অ্যালেক্সেই নাভালনিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিষ দিয়ে হত্যাচেষ্টা থেকে বেঁচে যাওয়া নাভালনি পাঁচ মাস জার্মানিতে থাকার পর আকাশযোগে গতকাল রোববার দেশের মাটিতে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গেই গ্রেপ্তার হয়েছেন। সংবাদমাধ্যম বিবিসির খবরে এমনটি জানানো হয়েছে।
এ দিন নাভালনিকে অভ্যর্থনা জানাতে মস্কো বিমানবন্দরে হাজার হাজার সমর্থক জড়ো হয়েছিলেন। সেখানে নামার আগেই তাঁকে বহনকারী ফ্লাইটটির পথ পরিবর্তন করে নিয়ে যাওয়া হয় শেরেমেতেইয়েভো বিমানবন্দরে।
অ্যালেক্সেই নাভালনি তাঁকে হত্যাচেষ্টার জন্য রুশ সরকারকে দায়ী করে আসছেন। ক্রেমলিন বরাবরই তা অস্বীকার করে। বিবিসি জানায়, অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের তদন্তে নাভালনির দাবিই সত্য বলে প্রতীয়মান হয়েছে।
নাভালনিকে আটক করা হতে পারে বলে সাবধান করা হলেও তিনি উড়োজাহাজে উঠেছিলেন। তিনি যে ফ্লাইটে করে মস্কো আসছিলেন সেটিতে অনেক সাংবাদিকও ছিলেন। বিবিসির রাশিয়ান সার্ভিসের একজন সংবাদদাতাও ওই ফ্লাইটে ছিলেন।
ফ্লাইটটি অবতরণের কিছুক্ষণ আগে পাইলট ঘোষণা দেন, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ফ্লাইটের পথ পরিবর্তন করে শেরেমেতেইয়েভো নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সেখানে অবতরণের পর নাভালনিকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে মস্কোর একটি পুলিশ স্টেশনে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই রাখা হয়েছে তাঁকে।
গ্রেপ্তারের কিছুক্ষণ আগে অ্যালেক্সেই নাভালনি বলেন, ‘আমি কোনো কিছুকে ভয় পাই না।’
এক বিবৃতিতে রাশিয়ার কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নাভালনি বারবার আইন ভঙ্গ করেছেন। সেজন্য তাঁর বিরুদ্ধে ডিসেম্বর থেকে পরোয়ানা জারি রয়েছে।
গত বছর আগস্টে সাইবেরিয়া যাওয়ার পথে এক আকাশযাত্রার সময় অসুস্থ হয়ে পড়েন ভ্লাদিমির পুতিনের প্রতিপক্ষ হিসেবে পরিচিত নাভালনি। চিকিৎসার জন্য ফ্লাইট জরুরি অবতরণ করে তাঁকে জার্মানির হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জার্মানির সরকার জানায়, নাভালনির শরীরে নভিচক নামের স্নায়ু বিকল করার বিষাক্ত এক রাসায়নিক প্রয়োগ করা হয়েছে।
বিষপ্রয়োগে হত্যা চেষ্টা থেকে বেঁচে, লম্বা সময় জার্মানির হাসপাতালে কাটিয়ে সুস্থ হয়ে রাশিয়া ফিরতেই গ্রেপ্তার করা হলো অ্যালেক্সেই নাভালনিকে।
দীর্ঘদিন ধরে রাশিয়াতে সংস্কারের জন্য ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন অ্যালেক্সেই নাভালনি। এর আগে বেশ কয়েকবার গ্রেপ্তার হয়েছেন তিনি।
গত জুনে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের আনা সাংবিধানিক সংস্কারের ভোটকে নাভালনি ‘অভ্যুত্থান’ বলে বর্ণনা করেছিলেন। তাঁর মতে, ওই সংস্কার ‘সংবিধানের লঙ্ঘন’। ওই সংস্কারের ফলে পুতিন আরো দুই মেয়াদ ক্ষমতায় থাকতে পারবেন।
যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিন্দা
ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ফ্রান্স ও ইতালি নাভালনির মুক্তি দাবি করেছে। নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান গ্রেপ্তারের বিষয়টিকে ‘মানবাধিকার লঙ্ঘন’ বলে উল্লেখ করেছেন।
এ ছাড়া ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট চার্লস মাইকেল বলেছেন, নাভালনিকে এভাবে গ্রেপ্তার করাটা মেনে নেওয়া যায় না। তাঁকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে।