কিন গ্যাংকে অব্যাহতির কারণ জানাতে অস্বীকৃতি চীনের
মাসখানেক ধরে নিখোঁজ থাকার পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিন গ্যাংকে গতকাল মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) অব্যাহতি দেয় চীন সরকার। এক বছরেরও কম সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন সদ্য অব্যাহতি পাওয়া সাবেক এই রাষ্ট্রদূত। তার স্থলে বসানো হয়েছে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইকে। তবে, কি কারণে কিনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে এ তথ্য জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে চীনা কর্তৃপক্ষ। আজ বুধবার (২৬ জুলাই) এ তথ্য জানিয়েছে ফরাসি সংবাদ সংস্থা এএফপি।
প্রতিবেদনে গণমাধ্যমটি জানিয়েছে, কি কারণে কিনকে বরখাস্ত করা হয়েছে সে কারণ জানতে এএফপি আজ দ্বারস্থ হয় চীনা কর্তৃপক্ষের। তবে, কারণ জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে তারা। স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে বলে জানায় চীনা কর্তৃপক্ষ।
বেইজিংয়ের শীর্ষ আইনসভা কিনকে গতকাল তার কার্যালয় থেকে সরিয়ে দেয়। এর আগে মাত্র ২০৭ দিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত সাবেক রাষ্ট্রদূত ও চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের আস্থাভাজন হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া কিনকে নিজ দপ্তর থেকে হটিয়ে দেওয়া হয়। কেন কিনের সঙ্গে এমনটি হলো তার রহস্য থেকেই গেল।
নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে আজ চীনের মুখপাত্র মাও নিনকে কিনের ইস্যুতে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকেরা। জবাবে এই মুখপাত্র রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থার প্রতিবেদনের কথা বলেন। এর বাইরে আর কোনো তথ্য দেননি তিনি। মাও বলেন, ‘কি কারণে কিনকে বরখাস্ত করা হয়েছে তা সিনহুয়া প্রতিবেদনে প্রকাশ করেছে। আপনারা সেটি দেখতে পারেন।’
সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিনের সংক্ষিপ্ত কর্মকালকে তিনি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন এই প্রশ্নের জবাবে মাও বলেন, ‘এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য আমি সঠিক ব্যক্তি নই।’ এ সময় উপস্থিত সাংবাদিকেরা কিনের বরখাস্ত নিয়ে মাওকে আরও প্রশ্ন করেন। তবে, এর কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি তিনি। মাও বলেন, ‘শীর্ষ আইনসভা ও প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্ত খুব স্পষ্ট। আমি আপনাদের সেসব তথ্য দেখতে বলব। আমার কাছে এর বেশি কোনো তথ্য নেই।’
এদিকে, চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট থেকে ৫৭ বছর বয়সী কিনের সকল তথ্য মুছে ফেলা হয়েছে। সেখানে কিনের নামে অনুসন্ধান করলেও কিছুই আসেনি। এমনকি, কিনের রাষ্ট্রদূত থাকার সময়কালেরও সব তথ্য মুছে ফেলা হয়েছে। তবে, চীনের অন্যসব সরকারি ওয়েবসাইটে কিনের নামে প্রতিবেদনগুলো রয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে স্টেট কাউন্সিল, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের ওয়েবসাইট।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে কিনের কোনো তথ্য নেই কেন এই প্রশ্নের জবাবে মাও বলেন, ‘ওয়েবসাইটে তথ্য প্রাসঙ্গিক ব্যবস্থাপনা বিধি অনুযায়ী আপডেট করা হয়।’
গত ২৫ জুন রাশিয়ার ডেপুটি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্ড্রু রোডেনকোর সঙ্গে বেইজিংয়ে বৈঠক করেন কিন গ্যাং। এরপর থেকেই তাকে আর জনসম্মুখে দেখা যায়নি। কিনের ভাগ্যে কি হবে তা নিয়ে সপ্তাহখানেক ধরেই নিশ্চুপ অবস্থানে ছিল চীনের ক্ষমতাসীনরা। এ নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করা হলে তারা স্বাস্থ্য ইস্যুর কথা বলেছিল।
কি কারণে কিনকে বরখাস্ত করা হয়েছে সে বিষয়ে কোনো তথ্য দেয়নি সংবাদ সংস্থা সিনহুয়া। এ বিষয়ে চীনা বিশ্লেষক বিল বিশোপ সিনোসিজম নিউজলেটারে লেখেন, ‘সব জায়গা থেকে কিনকে মুছে ফেলা কোনো না কোনো কিছু ঘটার ইঙ্গিত।’ একই মত এশিয়া সোসাইটি পলিসি ইন্সটিটিউটের চাইনিজ পলিটিক্সের ফেলো নিল থমাসের। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে এক পোস্টে থমাস লেখেন, ‘কিনকে বরখাস্ত একটি রাজনৈতিক শুদ্ধি বলে প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে।’