সুইং স্টেট কী? কেন নির্বাচনে সুইং স্টেট এতো গুরুত্বপূর্ণ?
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ‘সুইং স্টেট’ যেকোনো প্রার্থীর জন্য ফলাফল নির্ধারকের ভূমিকা পালন করে। ৫০টি অঙ্গরাজ্যের মধ্যে মাত্র অল্প কিছুসংখ্যক রাজ্যের ভোট অনেকটা দিক-নির্দেশক হিসেবে কাজ করে। তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ সুইং স্টেটের ভোট অনেক জাতীয় ব্যক্তিত্বের স্বপ্নকে ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে এমন নজিরও রয়েছে দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ইতিহাসে। খবর আলজাজিরার।
দেশটির জাতীয় নির্বাচনের ফলাফলকে প্রভাবিত করার যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকায় এইসব রাজ্যগুলোকে দোদুল্যমান বা সুইং স্টেট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। আবার প্রচণ্ড প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণে এসব অঙ্গরাজ্যগুলোকে ‘ব্যাটলগ্রাউন্ট স্টেট’ হিসেবেও ডাকা হয়। আর এ বছরও ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার যে আভাস পাওয়া যাচ্ছে, তাতে কিছু অঙ্গরাজ্যে তাদের অবশ্যম্ভাবী জয়ই নির্ধারণ তরে দিতে পারে কে বসতে যাচ্ছেন হোয়াইট হাউসের মসনদে।
তাই স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠতে পারে এই অতিগুরুত্বপূর্ণ সুইং স্টেট কী? কেনইবা সেগুলো এতো গুরুত্ব বহন করে?
সুইং স্টেট বলতে কী বোঝায়?
সুইং স্টেট বলতে বোঝায় একগুচ্ছ অঙ্গরাজ্যকে যেখানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সাধারণত দুই প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাডিড লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যায়। যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের নির্ধারক হিসেবে কাজ করে ইলেকটোরাল কলেজ ভোট। কেবল জনগণের সরাসরি ভোট নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারণ করে না। আর এ কারণে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য সুইং স্টেট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্যের জনসংখ্যার আনুপাতিক হিসাবে নির্ধারিত ইলেকটোরাল কলেজ ভোট। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে একজন প্রার্থীর কমপক্ষে ২৭০টি ইলেকটোরাল ভোট প্রয়োজন হয়।
যেহেতু বেশিরভাগ রাজ্যগুলো ধারাবাহিকভাবে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেয়, তাই অল্প সংখ্যক সুইং স্টেট তীব্র লড়াইয়ের ক্ষেত্রে জয়-পরাজয় নির্ধারকের ভূমিকায় চলে আসে। প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের মধ্যে তাই নিজেদের শক্ত ঘাঁটির পরিবর্তে সেই রাজ্যগুলোর ভোটারদের মন জয়ের আশায় প্রচণ্ড পরিশ্রম করার পাশাপাশি বিপুল অর্থ বিনিয়োগের প্রবণতা দেখা যায়।
কোন রাজ্যগুলোকে সুইং স্টেট বলা হয়?
সুইং স্টেটের প্রধান বৈশিষ্ট হলো এর অস্পষ্ট রাজনৈতিক ঝোঁক। এসব রাজ্যের ভোটার গত নির্বাচনে যে প্রার্থীকে ভোট দিয়েছিল, এবার তাকেই ভোট দেবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। আর এ কারণেরই সুইং স্টেট বদলেও যেতে পারে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ফ্লোরিডার কথা। ১৯৯০ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত এই রাজ্যটিকে সুইং স্টেট হিসেবে বিবেচনা করা হলেও এখন এটিকে আর তা বলা হচ্ছে না। কেননা এখানে এখন রিপাবলিকান দলের ভোটারদের রেজিস্ট্রেশন সংখ্যা অনেক বেশি।
তবে এবার যে রাজ্যগুলোকে তাদের নিজ বৈশিষ্টের জন্য আলাদা নজরে দেখা হচ্ছে তা হলো–অ্যারিজোনা, জর্জিয়া, মিশিগান, পেনসিলভানিয়া, উইসকনসিন, নেভাদা ও মিনেসোটা। আর সুইং স্টেটের এই তালিকায় নতুন করে যোগ হয়েছে নর্থ ক্যারোলাইনার নাম।
সুইং স্টেটের জরিপ কী বলছে?
সত্যি কথা বলতে কি এই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ধারা বলে দিচ্ছে জনপ্রিয়তার দৌড়ে কমলা হ্যারিস ও ডোনাল্ড ট্রাম্প সমানে সমান অবস্থানে রয়েছেন। যেমন অ্যারিজোনায় নির্বাচনি জরিপে দেখা যাচ্ছে, দুই প্রেসিডেন্ট প্রার্থীই প্রায় সমান অবস্থায় রয়েছেন। অথবা বলা যেতে পারে, ট্রাম্প মাত্র এক পয়েন্ট এগিয়ে আছেন কমলা হ্যারিসের চেয়ে। অন্যদিকে পেনসিলভানিয়াতেও রয়েছে প্রতিদ্বন্দ্বিতার উষ্ণ আভাস। এখানে কমলা হ্যারিস তার প্রতিদ্বন্দ্বি ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে এক শতাংশ ভোটারের মন জয় করে এগিয়ে আছেন।
মিনেসোটায় কমলা হ্যারিস বেশ খানিকটা এগিয়ে আছেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে। এখানে ট্রাম্পের চেয়ে পাঁচ থেকে আট পয়েন্ট এগিয়ে আছেন কমলা। তবে ভোটারদের মনমানসিকতা কখন পরিবর্তন হয় তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েই গেছে। এসব গড় পয়েন্ট ব্যবধান নির্দেশনা দিচ্ছে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে যাচ্ছে ৫ নভেম্বরের নির্বাচনে।