গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আরও ৭৯ ফিলিস্তিনি নিহত

ইসরায়েলি গোলাবর্ষণ ও বিমান হামলায় গাজা উপত্যকায় আরও অন্তত ৭৯ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের অনেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল-সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) পরিচালিত একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের কাছে ছিলেন।
স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ ও মেডিক সূত্রের বরাত দিয়ে শনিবার (১৪ জুন) এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
গাজার কেন্দ্রস্থলের আল-আওদা ও আল-আকসা হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, শনিবার এক দিনে অন্তত ১৫ জন নিহত হন। তারা নেতজারিম করিডোরের কাছে জিএইচএফ-এর একটি ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রে সাহায্য নিতে গেলে এ ঘটনা ঘটে। বাকি হতাহতের ঘটনা গাজার অন্যান্য এলাকায় ইসরায়েলি হামলায় ঘটে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত মাসে জিএইচএফ কার্যক্রম শুরু করার পর থেকে শুধুমাত্র ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রগুলোর আশপাশে হামলায় এ পর্যন্ত অন্তত ২৭৪ জন নিহত এবং দুই হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।
জিএইচএফ শনিবার বন্ধ ছিল বলে জানালেও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হাজার হাজার মানুষ ত্রাণের আশায় সেসব স্থানে ভিড় করে। ইসরায়েলের ১৫ সপ্তাহের কঠোর অবরোধ ও লাগাতার সামরিক অভিযানে গাজা এখন দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে।
"ত্রাণ কেন্দ্র যেন মৃত্যুস্থল"
আল জাজিরার সংবাদদাতা তারেক আবু আজযুম জানান, স্থানীয়দের অনেকেই এখন জিএইচএফ-এর বিতরণ কেন্দ্রগুলোকে “মৃত্যুস্থল” হিসেবে দেখছেন। তবে খাদ্যের তীব্র সংকটে পড়ে তারা বাধ্য হচ্ছেন প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে সেসব স্থানে ছুটে যেতে।
ইসরায়েল গত ২ মার্চ গাজায় সম্পূর্ণ মানবিক অবরোধ শুরু করে। মে মাসের শেষ দিকে আন্তর্জাতিক চাপে কিছু পরিমাণ সাহায্য ঢুকতে দেয় তারা, তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় অতি সামান্য বলে জানিয়েছে মানবিক সহায়তাকারী সংস্থাগুলো।
শনিবারের হামলা বিষয়ে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বা জিএইচএফ-এর পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য আসেনি।
জিএইচএফ — একটি যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল-সমর্থিত সংস্থা যা গাজায় নতুন ধরনের ত্রাণ বিতরণ মডেল বাস্তবায়ন করছে — ২৭ মে থেকে ত্রাণ বিতরণ শুরু করে। সংস্থাটি পরিচালনা করছেন জনি মুর, যিনি ২০১৬ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণায় উপদেষ্টা ছিলেন। তবে জাতিসংঘ বলছে, এই মডেল “নিরপেক্ষ বা মানবিক নয়”।
আরও বাস্তুচ্যুতি, মানবিক বিপর্যয় চরমে
শনিবারই ইসরায়েলি বাহিনী গাজার খান ইউনুস, আবাসান ও বানি সুহেইলাহ এলাকার বাসিন্দাদের বাড়িঘর ছেড়ে পশ্চিম দিকের তথাকথিত “মানবিক অঞ্চল”-এর দিকে চলে যেতে নির্দেশ দেয়। তারা জানিয়েছে, ওই এলাকায় “সন্ত্রাসী সংগঠনের” বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে।
জাতিসংঘের মানবিক সমন্বয় সংস্থা (ওসিএইচএ) জানায়, বর্তমানে গাজার ৮০ শতাংশের বেশি এলাকা ইসরায়েলি নিয়ন্ত্রিত সামরিক অঞ্চলের আওতায় পড়ে অথবা সেখানে বাস্তুচ্যুতি নির্দেশ জারি আছে। ফেব্রুয়ারিতে যুদ্ধবিরতি ভেঙে পুনরায় হামলা শুরুর পর থেকে আরও প্রায় ৬ লাখ ৬৫ হাজার মানুষ নতুন করে বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুসারে, ইসরায়েলের এই যুদ্ধ ও অবরোধে এখন পর্যন্ত ৫৫ হাজার ২৯০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক। পুরো উপত্যকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। গাজার অধিকাংশ মানুষ এখন বাস্তুচ্যুত ও অপুষ্টিতে ভুগছেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, মিশর ও কাতারের উদ্যোগে যুদ্ধবিরতি পুনরায় প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চললেও এখন পর্যন্ত ইসরায়েল বা হামাস কেউই তাদের প্রধান শর্ত থেকে সরে আসার ইঙ্গিত দেয়নি। হামাস চায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতি, আর ইসরায়েল চায় যেকোনো সময় যুদ্ধ ফের শুরু করার অধিকার।