গাজায় ইসরায়েলি হামলা বন্ধের আহ্বান যুক্তরাজ্য, ফ্রান্সসহ ২৩ দেশের

গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ অবিলম্বে বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ দুই ডজনেরও বেশি দেশ। এক যৌথ বিবৃতিতে তারা সতর্ক করে দিয়েছে, ইসরায়েলের আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতা আরও গভীর হচ্ছে। সেখানে বেসামরিক নাগরিকদের দুর্ভোগ নতুন গভীরতায় পৌঁছেছে।
২১ মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা এই যুদ্ধ গাজার ২০ লাখেরও বেশি বাসিন্দার জন্য এক ভয়াবহ মানবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। সোমবার (২১ জুলাই) প্রকাশিত এই বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলো জোর দিয়ে বলেছে, যুদ্ধ এখনই শেষ হওয়া উচিত।
যৌথ বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীরা বলেন, গাজার বেসামরিক নাগরিকদের দুর্ভোগ নতুন গভীরতায় পৌঁছেছে। তারা আলোচনার মাধ্যমে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি, ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের হাতে আটক বন্দিদের মুক্তি ও অত্যন্ত প্রয়োজনীয় সাহায্যের অবাধ প্রবাহের আহ্বান জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে পানি ও খাদ্যের মৌলিক চাহিদা মেটাতে ইচ্ছুক শিশুসহ বেসামরিক নাগরিকদের অমানবিক হত্যার তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে।
জাতিসংঘ ও গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত মে মাসের শেষ দিকে গাজায় খাদ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে ৮৭৫ জন মানুষ নিহত হয়েছেন। যদিও ইসরায়েল দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে অবরোধ কিছুটা শিথিল করেছিল, তবুও এই প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে।
দেশগুলো ইসরায়েলের সমালোচনা করে বলেছে, তাদের সাহায্য বিতরণের পদ্ধতি বিপদজনক ও গাজার মানুষের জীবনকে আরও কঠিন করে তুলছে। তারা মনে করে, ইসরায়েল যেভাবে সাহায্য দিচ্ছে, তাতে গাজার মানুষের সম্মান নষ্ট হচ্ছে ও অস্থিরতা বাড়ছে। দেশগুলো আরও পরিষ্কারভাবে বলেছে, গাজার সাধারণ মানুষকে দরকারি সাহায্য দিতে ইসরায়েলের অস্বীকার করাটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী ইসরায়েলের যে দায়িত্ব আছে, তা তাদের অবশ্যই পালন করতে হবে।
আল জাজিরার লন্ডন প্রতিনিধি সোনিয়া গ্যালেগো এই বিষয়টিকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, ইসরায়েলের বন্ধু দেশগুলোও এখন তাদের সমালোচনা করছে, যা আগে এতটা দেখা যায়নি। তার মতে, ইউরোপের বাইরেও অনেক দেশ এখন গাজার পরিস্থিতি নিয়ে একই রকম মতামত দিচ্ছে। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেছেন, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, কানাডা ও জাপানের মতো দেশগুলোর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও এই বিবৃতিতে নিজেদের নাম যোগ করেছে।
যুদ্ধবিরতির আহ্বান ও কূটনৈতিক প্রচেষ্টা
নতুন এই যৌথ বিবৃতিতে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, দেশগুলো এই অঞ্চলে শান্তির রাজনৈতিক পথকে সমর্থন করার জন্য পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত।
ইসরায়েল ও হামাস যুদ্ধ থামানোর জন্য আলোচনা করছে, কিন্তু এখনো কোনো ফল পাওয়া যায়নি। এটা পরিষ্কার নয় যে, কোনো চুক্তি হলে যুদ্ধ পুরোপুরি বন্ধ হবে কিনা। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বারবার বলছেন, গাজায় যদি তারা আরও হামলা চালায়, তাহলে হামাস আলোচনায় বসতে বাধ্য হবে।
এদিকে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি সংসদে বলেছেন, যুদ্ধ শেষ করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ও মিশর যে চেষ্টা করছে তার জন্য তাদের ধন্যবাদ। ল্যামি স্পষ্ট করে বলেছেন, যুদ্ধ সামরিকভাবে জেতার কোনো উপায় নেই। যে যুদ্ধবিরতি হবে, সেটাই হবে শেষ যুদ্ধবিরতি।

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে হামাসের হামরার পর ইসরায়েল গাজায় যুদ্ধ শুরু হয়, যেখানে কমপক্ষে এক হাজার ১২৯ জন নিহত ও ২৫১ জনকে বন্দি করা হয়। গাজায় এখনো ৫০ বন্দি রয়ে গেছেন, তবে অর্ধেকেরও কম জীবিত বলে মনে করা হচ্ছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে এ পর্যন্ত ৫৯ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।