আউন্সপ্রতি চার হাজার ডলার ছুঁয়ে রেকর্ড গড়ল স্বর্ণের দাম
বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম নতুন ইতিহাস তৈরি করেছে। স্থানীয় সময় বুধবার (৮ অক্টােবর) প্রথমবারের মতো আউন্সপ্রতি চার হাজার ডলারের সীমা অতিক্রম করেছে স্বর্ণের দাম। ভূরাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং যুক্তরাষ্ট্রে সুদের হার কমানোর প্রত্যাশার কারণে বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে স্বর্ণের দিকে ঝুঁকছেন।
স্পট গোল্ড ১.২ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে চার হাজার ৩২ ডলার ৪৬ সেন্টে। অন্যদিকে ডিসেম্বর সরবরাহের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের গোল্ড ফিউচারস ১.৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে হয় চার হাজার ৫৪ ডলার ৮০ সেন্ট প্রতি আউন্স। খবর রয়টার্সের।
২০২৫ সালে এখন পর্যন্ত স্পট গোল্ডের দাম বেড়েছে ৫৩ শতাংশ যা গত বছরের ২৭ শতাংশ বৃদ্ধির চেয়েও অনেক বেশি। এই উত্থানের পেছনে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সুদের হার কমানোর প্রত্যাশা, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর স্বর্ণের কেনা বিনিয়োগ তহবিলে প্রবাহ বৃদ্ধি এবং দুর্বল মার্কিন ডলার।
স্বাধীন ধাতু ব্যবসায়ী তাই ওং বলেন, বাজারে এখন এত আস্থা তৈরি হয়েছে যে বিনিয়োগকারীরা পরবর্তী বড় লক্ষ্য পাঁচ হাজার ডলারের দিকে তাকিয়ে আছেন। তিনি বলেন, মধ্যপ্রাচ্য বা ইউক্রেনে স্থায়ী যুদ্ধবিরতির মতো ঘটনা সাময়িক প্রভাব ফেলতে পারে। তবে বিশাল ঋণ রিজার্ভ বৈচিত্র্যকরণ এবং দুর্বল ডলার স্বল্পমেয়াদে বদলাবে না।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি কার্যক্রম বন্ধের সপ্তম দিন চলছে যা গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সূচক প্রকাশে বিলম্ব ঘটাচ্ছে। এতে বিনিয়োগকারীরা বিকল্প তথ্যসূত্রের ওপর নির্ভর করছেন। বাজার বিশ্লেষকদের ধারণা ফেডারেল রিজার্ভ এই মাসে ২৫ বেসিস পয়েন্ট এবং ডিসেম্বরে আরও ২৫ বেসিস পয়েন্ট সুদ কমাতে পারে।
কেসিএম ট্রেডের প্রধান বাজার বিশ্লেষক টিম ওয়াটারার বলেন, অনিশ্চয়তা বাড়লে স্বর্ণের দামও সাধারণত বাড়ে। এখনও সেই চিত্রই দেখা যাচ্ছে। তবে চার হাজার ডলারের সীমা ছোঁয়ায় অনেক বিনিয়োগকারী লাভ তুলে নিতে পারেন যা স্বল্পমেয়াদে চাপ তৈরি করতে পারে।
বিশ্বজুড়ে রাজনৈতিক অস্থিরতাও স্বর্ণের দাম বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে। ফ্রান্স ও জাপানের রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা স্বর্ণের চাহিদা আরও বাড়িয়েছে। গোল্ডম্যান স্যাকস ও ইউবিএস ২০২৬ সালের জন্য স্বর্ণের দাম নিয়ে তাদের পূর্বাভাস বাড়িয়েছে কারণ স্বর্ণ সমর্থিত বিনিয়োগ তহবিল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্রয় এবং সুদের হার কমানোর সম্ভাবনা দাম বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।
হেরাউস মেটালস জার্মানির ট্রেডার আলেক্সান্ডার জুমফে বলেন, চার হাজার ডলার সীমা ভাঙার পর বাজারে নতুন টেকনিক্যাল রেজিস্ট্যান্স তৈরি হয়েছে। পরবর্তী প্রতিরোধ স্তর চার হাজার ৫০ থেকে চার হাজার ১০০ ডলার আর সমর্থন স্তর তিন হাজার ৯০০ ডলারের কাছাকাছি।
অন্যদিকে অন্যান্য মূল্যবান ধাতুর বাজারেও উত্থান দেখা গেছে। রুপা ১.৬ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৮ ডলার ৫৭ সেন্ট প্রতি আউন্সে। প্লাটিনাম ১.৬ শতাংশ বেড়ে হয়েছে এক হাজার ৬৪৪ ডলার ৪০ সেন্ট। প্যালাডিয়াম ৩.১ শতাংশ বেড়ে পৌঁছেছে এক হাজার ৩৭৮ ডলার ৮৬ সেন্ট প্রতি আউন্সে।

এনটিভি অনলাইন ডেস্ক