যুদ্ধবিরতি চুক্তি : গাজায় ফিলিস্তিনিদের উল্লাস, তেলআবিবেও আনন্দ

গাজা উপত্যকায় যুদ্ধ অবসানের লক্ষ্যে ‘যুদ্ধ বিরতি চুক্তি’ ঘোষণার পর অনবরত বোমা হামলার শিকার ফিলিস্তিনিরা স্বস্তির পাশাপাশি উল্লাস প্রকাশ করেছে। অন্যদিকে ইসরায়েলের তেলআবিব শহর থেকেও পাওয়া গেছে উদযাপনের সংবাদ। খবর আলজাজিরার।
যুদ্ধ বিধ্বস্ত গাজা উপত্যকায় চুক্তির খবর আসার পরপরই দক্ষিণাঞ্চলীয় খান ইউনিস শহরের লোকজন তা উদযাপন করতে রাস্তায় বেরিয়ে আসে। সেখানকার অধিবাসীরা আশা করছে এর ফলে ইসরায়েলের হামলা থেকে সত্যিকারের মুক্তি সম্ভব হবে। ছয় মাস আগে অস্ত্রবিরতি ঘোষণার পর সেই অবস্থান থেকে সরে এসে পুরোদমে সংঘাতকে উসকে দেওয়ার সেই ঘটনার আর পুনরাবৃত্তি হবে না বলেই আশা করছে গাজার অধিবাসীরা।
এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গাজার বাসিন্দা আব্দুল মাজিদ বলেন, ‘এই যুদ্ধবিরতির জন্য আল্লাহকে অশেষ ধন্যবাদ, রক্তপাত ও হত্যাযজ্ঞ শেষ হওয়ার জন্য… গাজার সবাই খুব খুশি।’
আরেকজন অধিবাসী খালেদ শাত বলেন, ‘এই মুহূর্তগুলো ঐতিহাসিক হিসেবে বিবেচিত হবে, যার জন্য অনেকদিন ধরে অপেক্ষায় ছিল ফিলিস্তিনিরা।’
আলজাজিরার গাজা প্রতিনিধি হানি মাহমুদ জানান, যুদ্ধরত এই উপত্যকার জনসাধারণের জন্য এই যুদ্ধবিরতির চুক্তি সম্মিলিতভাবে স্বস্তি এনে দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘এটি একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত ও ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয় এটা স্বস্তির।’
এ বছরের শুরুতে ইসরায়েলি পক্ষের একটি সংক্ষিপ্ত অস্ত্রবিরতির পর থেকে মাসের পর মাস ধরে তাদের কারণে সৃষ্ট দুর্ভিক্ষের কবলে পড়া গাজাবাসীর দৃষ্টি এখন ত্রাণসামগ্রী, খাদ্য ও চিকিৎসা সরবরাহ আসার পর সেগুলো কিভাবে বিতরণ করা হবে সেই দিকে।
স্থানীয় সময় বুধবার (৮ অক্টোবর) রাতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই যুদ্ধবিরতি চুক্তির ঘোষণা দেন। এর ফলে গত দুই বছর ধরে চলতে থাকা যুদ্ধ শেষ করার জন্য যে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে তার প্রথম ধাপ শুরু হলো বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে। এই চুক্তির ফলে গাজার জিম্মি করে রাখা ইসরায়েলি বন্দিদের মুক্তির বিনিময়ে ইসরায়েলের কারাগার থেকে ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি দেওয়ার কথা রয়েছে। তবে চুক্তির বিষয়ে বিস্তারিত পরে জানানো হবে বলে জানিয়েছে মধ্যস্থতাকারী দেশ কাতার।
চুক্তির দ্বিতীয় ধাপ অনুযায়ী, অধিকৃত অঞ্চল থেকে ইসরায়েলি বাহিনীকে পুরোপুরি প্রত্যাহার করতে হবে ও ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসকে নিরস্ত্র করতে হবে। পাশাপাশি গাজায় প্রতিষ্ঠিত হবে একটি নতুন নিরাপত্তা ও শাসন ব্যবস্থা। তবে এগুলো এখনো দরকষাকষির পর্যায়ে রয়েছে, এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনো আসেনি।

এদিকে ইসরায়েলের ভেতরেও জনতা একত্রিত হয়ে যুদ্ধবিরতির ঘোষণাকে স্বাগত জানাতে রাস্তায় বেরিয়ে আসে। বেশকিছু দিন থেকেই ইসরায়েলে যুদ্ধবিরোধী জনমত তীব্র হচ্ছিল। আর আজকের ঘোষণার পরপর তেলআবিবের পণবন্দি চত্বরে জিম্মি থাকা লোকজনের আত্মীয়স্বজনেরা একত্রিত হতে থাকেন। এ প্রসঙ্গে পণবন্দি হয়ে থাকা মাতান জাংগাউকারের মা ইনাভ জাংগাউকার বলেন, ‘আমরা উচ্ছ্বসিত, অশ্রু ঝরা এখনো বন্ধ হয়নি আমাদের, তবুও এটা আনন্দের।’
পণবন্দি ও নিখোঁজ লোকজনের পরিবারের সদস্যদের ফোরাম নতুন যুদ্ধবিরতির চুক্তিকে স্বাগত জানিয়ে বলেছে, আমাদের সংগ্রাম এখনো শেষ হয়ে যায়নি। যতক্ষণ না সব বন্দির মুক্তি হচ্ছে এ লড়াই চলবে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু প্রথম ধাপের এই চুক্তিকে ‘ইসরায়েলের জন্য একটি দারুণ দিন’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, চুক্তি অনুমোদনের জন্য তিনি বৃহস্পতিবার মন্ত্রিসভার বৈঠক ডেকেছেন।