আরও চার জিম্মির মরদেহ ফেরত দিল হামাস

ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস আরও চারজন ইসরায়েলি জিম্মির মরদেহ ইসরায়েলের কাছে হস্তান্তর করেছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)।
রেড ক্রস মঙ্গলবার (১৪ অক্টােবর) গভীর রাতে কফিনে করে মৃতদেহগুলো ইসরায়েলি সেনাদের কাছে হস্তান্তর করে। এর আগে ইসরায়েল সতর্ক করেছিল, যতক্ষণ না সব মৃত জিম্মির দেহ ফেরত দেওয়া হচ্ছে, ততক্ষণ গাজায় মানবিক সহায়তা সীমিত রাখা হবে। খবর বিবিসির।
সোমবার (১৩ অক্টােবর) হামাস ২০ জন জীবিত ও ৪ জন মৃত জিম্মিকে ফিরিয়ে দিয়েছিল। এর পাশাপাশি, মঙ্গলবার রেড ক্রসের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ইসরায়েলে আটকে থাকা ৪৫ জন ফিলিস্তিনির মরদেহও গাজায় ফেরত পাঠানো হয়েছে।
এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী, সোমবার দুপুরের মধ্যে মোট ৪৮ জন জিম্মিকে (জীবিত ও মৃত) ফেরত দেওয়ার কথা ছিল। যদিও সব জীবিত জিম্মি ফেরত দেওয়া হয়েছে, এখনো ২০ জন মৃত জিম্মির দেহ ফেরত না আসায় হামাস ও ইসরায়েল উভয়ের ওপর চাপ বাড়ছে।
আইডিএফ এক বিবৃতিতে বলেছে, “হামাসকে চুক্তির শর্ত পূরণ করতে হবে এবং সব জিম্মির মরদেহ যথাযথভাবে ফেরত দিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।”
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী সতর্ক করে বলেছেন, হামাস যদি দেরি করে বা ইচ্ছাকৃতভাবে দেহ ফেরত না দেয়, তবে তা হবে চুক্তির “গুরুতর লঙ্ঘন” এবং এর “উপযুক্ত জবাব দেওয়া হবে।”
ইসরায়েলি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, হামাসের পক্ষ থেকে মরদেহ ফেরত না দেওয়ার কারণে গাজায় সাহায্য প্রবেশ সীমিত রাখা ও মিসরের সঙ্গে রাফাহ সীমান্ত খুলে দেওয়ার পরিকল্পনা বিলম্বিত করা হয়েছে।
হামাস দাবি করছে, তারা সব মৃত জিম্মির দেহ শনাক্ত করতে এবং উদ্ধার করতে সমস্যায় পড়ছে। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত চুক্তির অনুলিপিতেও বলা হয়েছিল, হামাস হয়তো নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সব মৃতদেহ খুঁজে পাবে না।
একজন ইসরায়েলি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, যেসব জিম্মির দেহ এখনো পাওয়া যায়নি, তাদের সন্ধানে একটি আন্তর্জাতিক টাস্কফোর্স গঠন করা হবে।
ট্রাম্প এক্সে লিখেছেন, “একটি বড় দায়িত্ব শেষ হয়েছে, কিন্তু কাজ শেষ হয়নি! মৃতদের এখনো ফেরত আনা হয়নি—দ্বিতীয় ধাপ এখনই শুরু হচ্ছে!”
মার্কিন প্রেসিডেন্টের ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে প্রায় দুই হাজার ফিলিস্তিনি বন্দি ও আটক ব্যক্তিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। যুদ্ধবিরতি ১০ অক্টোবর দুপুর ১২টা থেকে কার্যকর হয় এবং তা মূলত টিকে আছে।
তবে ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে, মঙ্গলবার ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় গাজার পূর্বাঞ্চল ও খান ইউনিসে সাতজন নিহত হয়েছেন।
ওয়াফা সংবাদ সংস্থার মতে, গাজার শুজাইয়া এলাকায় এক ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় পাঁচজন নিহত হন। ইসরায়েল দাবি করেছে, তারা কেবল তখনই গুলি চালায় যখন মানুষ যুদ্ধবিরতি সীমারেখা অতিক্রম করে।
এদিকে গাজায় হামাস যোদ্ধারা জনসমক্ষে আটজন ফিলিস্তিনিকে গুলি করে হত্যা করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে, যা স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ও ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে। হামাস বলছে, তারা “আইনশৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার” করছে, তবে অনেকেই মনে করছেন, গোষ্ঠীটি প্রতিদ্বন্দ্বী ও সমালোচকদের ভয় দেখাতে এ পদক্ষেপ নিচ্ছে।
সোমবার ট্রাম্প মিসরের প্রেসিডেন্ট ও কাতারের আমিরের সঙ্গে শান্তি ঘোষণায় সই করেন। তুরস্কও আলোচনার শেষ পর্যায়ে বড় ভূমিকা রাখে। অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁসহ ২০টিরও বেশি দেশ উপস্থিত ছিলেন। তবে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ও হামাস সরাসরি অংশ নেননি।

চুক্তি অনুযায়ী, গাজার অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসন পরিচালনা করবে ফিলিস্তিনি টেকনোক্র্যাটদের একটি কমিটি, যা “বোর্ড অব পিস” নামে পরিচিত একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার তত্ত্বাবধানে থাকবে। পরবর্তী ধাপে এই প্রশাসন হস্তান্তর করা হবে সংস্কারকৃত ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএ) কাছে।
তবে এর আগে কঠিন আলোচনার মধ্য দিয়ে যেতে হবে—বিশেষ করে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার, হামাসের নিরস্ত্রীকরণ এবং গাজার ভবিষ্যৎ শাসনব্যবস্থা নিয়ে।
হামাস জানিয়েছে, তারা কেবল তখনই নিরস্ত্রীকরণ করবে যখন একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হবে এবং বিদেশি তত্ত্বাবধানে গাজা পরিচালনার প্রস্তাব তারা প্রত্যাখ্যান করেছে।