পাঁচ হাজার বছরের পুরোনো পদ্ধতিতে তৈরি হচ্ছে রুটি!

প্রাথমিক ব্রোঞ্জ যুগে প্রায় পাঁচ হাজার বছরেরও বেশি আগে, বর্তমান তুরস্কের মধ্যাঞ্চলে একটি নতুন নির্মিত বাড়ির চৌকাঠের নিচে রুটির একটি টুকরো পুঁতে রাখা হয়েছিল। সম্প্রতি প্রত্নতাত্ত্বিকরা সেই রুটিটি আবিষ্কার করেছেন এবং স্থানীয় একটি বেকারিকে সেটি পুনরায় তৈরি করতে সাহায্য করেছেন। আর সেই প্রাচীন রেসিপির রুটি কিনতে এখন দোকানে দীর্ঘ লাইন দিচ্ছেন গ্রাহকরা।
সবচেয়ে প্রাচীন বেকড রুটির আবিষ্কার
প্যানকেকের মতো দেখতে, গোলাকার ও সমতল এই রুটিটির ব্যাস প্রায় ১২ সেন্টিমিটার (পাঁচ ইঞ্চি)। এটি কেন্দ্রীয় আনাতোলিয়ান শহর এসকিসেহিরের কাছে অবস্থিত কুলুওবাতে খননের সময় আবিষ্কৃত হয়।
প্রত্নতাত্ত্বিক ও খনন পরিচালক মুরাত তুর্কটেকি বলেছেন, এটিই খননের সময় পাওয়া সবচেয়ে প্রাচীন বেকড রুটি, যা তার আকৃতি প্রায় পুরোপুরি সংরক্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে।
তুর্কটেকি বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানান, রুটি সাধারণত টুকরো টুকরো পাওয়া গেলেও এটি পুড়িয়ে ফেলার কারণে আশ্চর্যজনকভাবে সংরক্ষিত ছিল। রুটিটি প্রায় তিন হাজার ৩০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে নির্মিত একটি বাসস্থানের প্রবেশপথের নীচে পোঁতা হয়েছিল। রুটিটি পোড়ানোর আগে একটি টুকরো ছিঁড়ে ফেলা হয়েছিল ও তারপর বাড়িটি তৈরির সময় পুঁতে দেওয়া হয়।
তুর্কটেকি মনে করেন, এটি সম্ভবত প্রাচুর্যের প্রতীক হিসেবে কোনো আচার-অনুষ্ঠানের অংশ ছিল।
প্রাচীন রেসিপি পুনরুৎপাদন
২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে আবিষ্কৃত এই পোড়া রুটিটি এসকিসেহির প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘরে প্রদর্শন করা হচ্ছে। এই আবিষ্কারে অনুপ্রাণিত হয়ে শহরের মেয়র আয়েস আনলুস রুটিটি পুনরুৎপাদনের উদ্যোগ নেন।
বিশ্লেষণে দেখা গেছে, রুটিটি তৈরি হয়েছিল মোটা গুঁড়ো করা এমার ময়দা (এক প্রাচীন জাতের গম), মসুর ডালের বীজ ও সম্ভবত কোনো অনির্ধারিত উদ্ভিদের পাতা খামির হিসেবে ব্যবহার করে। যেহেতু তুরস্কে এখন প্রাচীন এমার বীজ নেই, তাই গবেষকরা এমারের অনুরূপ কাভিলকা গম, সঙ্গে বুলগুর ও মসুর ডাল ব্যবহার করে মূল রেসিপির যতটা সম্ভব কাছাকাছি যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
পৌরসভা কর্তৃক পরিচালিত হাল্ক একমেক বেকারি (যার অর্থ ‘জনগণের রুটি’) কর্মীরা প্রতিদিন হাতে কুলুওবার ৩০০টি রুটি তৈরি করছেন। বেকারির ব্যবস্থাপক সেরাপ গুলার বলেন, পূর্বপুরুষদের গমের আটা, মসুর ডাল ও বুলগুরের সংমিশ্রণে একটি স্বাদযুক্ত, কম গ্লুটেনযুক্ত এবং সংরক্ষণকারী-মুক্ত রুটি তৈরি হয়েছে।
প্রথম কুলুওবা রুটির দাম ছিল ৫০ তুর্কি লিরা (প্রায় ১.২৮ ডলার), তা মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বিক্রি হয়ে যায়।
গ্রাহক সুজান কুরু বলেন, আমি তাড়াতাড়ি এসেছিলাম কারণ ভয় ছিল যে আর অবশিষ্ট থাকবে না। আমি এই প্রাচীন রুটির স্বাদ সম্পর্কে কৌতূহলী।
এই রুটির পুনঃআবিষ্কার খরার সঙ্গে আরও ভালোভাবে মানিয়ে নিতে পারে এমন প্রাচীন গম চাষে নতুন করে আগ্রহ জাগিয়েছে। এসকিসেহির প্রদেশ বর্তমানে খরার শিকার।
মেয়র আনলুস বলেন, আমাদের পূর্বপুরুষরা আমাদের একটি শিক্ষা দিচ্ছেন। জলবায়ু সংকটের এই সময়ে তাদের মতো আমাদেরও কম পানি প্রয়োজন এমন ফসলের দিকে এগিয়ে যাওয়া উচিত। তিনি খরা ও রোগ প্রতিরোধী কাভিলকা গমের চাষ পুনরুজ্জীবিত করার আশা প্রকাশ করেন।