মারুফার হৃদয়ছোঁয়া গল্পে মিশে আছে অবহেলার দিনগুলি

নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বিপক্ষে পাকিস্তানের ওমাইমা সোহেলের উইকেটের ভিডিওটা অনেকেরেই চোখে পড়েছে হয়ত। মারুফা আক্তারের দুর্দান্ত ইনসুইংয়ে বোল্ড হন তিনি। বাংলাদেশি এই পেসার তার গতি-সুইংয়ের কারণে ক্রিকেট মহলে প্রশংসায় ভাসছেন, রীতিমতো তারকা বনে গেছেন। কিন্ত তার এই জায়গায় উঠে আসার পেছনের গল্পটা করুণ। অশ্রুসিক্ত কন্ঠে আইসিসির এক ডকুমেন্টারিতে তিনি সেটি শুনিয়েছেন।
বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের উদীয়মান পেসার মারুফা আক্তার এখন আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিজেকে প্রমাণ করছেন দারুণভাবে। তার বেড়ে ওঠার মাঝে দারিদ্র্য, সামাজিক অবহেলা আর চোখে পানি এনে দেওয়ার মতো সংগ্রামের গল্প লেখা রয়েছে।
এই তরুণ পেসার সম্প্রতি নিজের শৈশব ও বেড়ে ওঠার কষ্টের গল্প শেয়ার করেছেন আইসিসির একটি ডকুমেন্টারিতে। এই উপলক্ষে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচের আগে প্রচারিত ভিডিওতে দেখা যায়, স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে বারবার কান্নায় ভেঙে পড়েছেন ২০ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার।
সামাজিক অবহেলার মাঝে বেড়ে ওঠা মারুফা বলেন, ‘অনেক সময় বিয়েশাদিতে আমাদের ডাকা হতো না। বলা হতো, আমাদের ভালো জামাকাপড় নেই। আমরা গেলে তারা লজ্জা পাবে—এমন কথাও শুনেছি (কান্নায় ভেঙে পড়েন)... এমনও সময় গেছে, ঈদে নতুন জামা কেনার সামর্থ্য ছিল না।’
করোনা মহামারির সময় বাবার সঙ্গে মাঠে কাজ করতেন মারুফা। তাদের দিন পার হতো বর্গা নেওয়া জমিতে চাষাবাদ করে। গ্রামের মানুষজন থেকেও তেমন সহায়তা মেলেনি, বরং উপেক্ষা আর অবহেলাই ছিল সঙ্গী।
এই বিষয়ে মারুফা বলেন, ‘আমার বাবা কৃষক। টানাপোড়েন লেগেই থাকত। গ্রামের মানুষজনও খুব একটা পাশে দাঁড়ায়নি।’
তবে ক্রিকেট মাঠে মারুফার গল্পটা একদমই ভিন্ন। এবার বিশ্বকাপে দারুণ ছন্দে আছেন তিনি। তিন ম্যাচে নিয়েছেন ৫ উইকেট, ইকোনমি রেট মাত্র ৬.১৫। ওমাইমা সোহেল ও সিদরা আমিনকে দুর্দান্ত ইনসুইংয়ে বোল্ড করে পুরো ক্রিকেট দুনিয়ায় নজরে এখন এই পেসার।
২০২৩ সালের অনূর্ধ্ব-১৯ নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর জাতীয় দলে জায়গা পান মারুফা। তখন থেকেই নজর কাড়ছেন ধারাবাহিক পারফরম্যান্সে। তার বর্তামান অবস্থানে উঠে আসার পর নিজের ভেতরের প্রশান্তির কথাও জানিয়েছেন।
মারুফা বলেন, ‘যে অবস্থানে এখন আছি, অনেকে সেখানে যেতে পারে না। পরিবারকে আমি যেভাবে সাহায্য করছি, অনেক ছেলেও এমনটা পারে না। এটা ভেতর থেকে এক রকম শান্তি দেয়।’
তারকা বনে যাওয়া মারুফার মাঝে অহংবোধটা নেই। বরং ছোটবেলার ইচ্ছেটা যেন এখন লজ্জায় পরিণত হয়েছে। মারুফা বলেন, ‘ছোটবেলায় ভাবতাম, কবে মানুষ আমাদের দেখবে, কবে হাততালি দেবে! এখন টিভিতে নিজেকে দেখে লজ্জা পাই (হাসি)।’
এখন পর্যন্ত মারুফার ক্যারিয়ারে ২৯টি ওয়ানডেতে ২৫ উইকেট পেয়ছেন এবং ৩০টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ২০ উইকেট রয়েছে। ওয়ানডেতে ২০২৩ সালের জুলাইতে ভারতের বিপক্ষে চার উইকেট এবং টি-টেয়েন্টিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তিন উইকেট নেওয়া তার ক্যারিয়ারের স্মরণীয় পারফরম্যান্সগুলোর মধ্যে অন্যতম।