সুপার ওভারে বাংলাদেশের অজ্ঞতা নাকি গোঁড়ামি?

ম্যাচ শেষে অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ বললেন, ‘আমার মনে হয় ব্যাটিং করার জন্য উইকেটটা সহজ ছিল না। সব ব্যাটারই সংগ্রাম করছিল কিন্তু রিশাদ খুব ভালো করেছে। সে আত্মবিশ্বাসী ছিল এবং খুব ভালো ব্যাটিং করেছে।’
মিরাজ যে কথাগুলো বলছিলেন, তিনি কি নিজে সেটি শুনতে পাচ্ছিলেন? যদি শুনতেই পান, তাহলে সুপার ওভারে অমন দ্বিচারিতা করলেন কেন? সংবাদ সম্মেলনে এসে যার ব্যাটিংয়ের প্রশংসা করলেন, ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তাকেই খুঁজে পাওয়া গেল না। বরং যাদের সংগ্রাম করার গল্প শোনানো হলো, তাদের ওপরই ভরসা করা হলো।
বাংলাদেশ কি আসলেই এই রান তাড়া করে জিততে নেমেছিল? এখন সেই প্রশ্ন তোলা বোধহয় অযৌক্তিক হবে না। কিংবা প্রশ্নটা একটু ঘুরিয়ে করা যায়, সুপার ওভারে বাংলাদেশ অজ্ঞতার পরিচয় দিল না কি গোঁড়ামির?
নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথমবার সুপার ওভার খেলল বাংলাদেশ। প্রথমে বল করতে নেমে মুস্তাফিজুর রহমান খারাপ করেননি। ফিজের ওভার থেকে ১০ রান নিতে পেরেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কিন্তু সেই রান তাড়া করতে পারেনি বাংলাদেশ।
মূল ম্যাচে বাংলাদেশ মোট ছক্কা হাঁকিয়েছিল ৭টি, যার তিনটিই হাঁকান রিশাদ। নুরুল হাসান সোহানও হাঁকিয়েছিলেন একটি। কিন্তু সুপার ওভারে তারা নয়, বরং কোনো ছক্কা হাঁকাতে না পারা নাজমুল হোসেন শান্ত কিংবা ডটবলের পর ডটবল খেলা সৌম্য সরকারদের ওপর ভরসা করা হয়েছিল।
বাংলাদেশের হয়ে সুপার ওভারে ব্যাট করতে নেমেছিলেন নিয়মিত দুই ওপেনার সাইফ হাসান ও সৌম্য সরকার। এর মধ্যে সৌম্য ৩ বলে ৩ রান করে আউট হয়ে যান। এরপর নামেন তিন নম্বরে খেলা নাজমুল হোসেন শান্ত। শেষ পর্যন্ত সাইফ ৩ বলে ২ আর শান্ত ১ বলে ০ রানে অপরাজিত থাকেন।
এবার তাকানো যাক মূল খেলায়। সেখানে সৌম্য সরকার ৮৯ বলে করেছিলেন ৪৫ রান। ৩ চার আর এক ছক্কা মারতে পেরেছিলেন তিনি। সাইফ ফিরেছিলেন ১৬ বলে ৬ রান করে। আর শান্ত ফিরেছিলেন ২১ বলে ১৫ রানে।
সবার ব্যাটিংয়ের যেখানে দৈন্যদশা ছিল সেখানে ব্যতিক্রম ছিলেন নুরুল হাসান সোহান আর রিশাদ হোসেন। দুই চার আর এক ছক্কায় সোহান করেছিলেন ২৪ বলে ২৩ রান। রিশাদের ইনিংস ছিল আরও মারকুটে। মাত্র ১৪ বলে ৩৯ রান করেছিলেন তিনি। সমান ৩টি করে চার ও ছক্কা মেরেছিলেন তিনি।
এরপরও এমন ব্যাটারদের ওপর বাংলাদেশ বাজি রাখে নিয়মিত দুই ওপেনারের দিকে। যারা চলমান সিরিজের দুই ম্যাচেই ভালো করতে পারেননি। বিপরীতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ চিন্তা করেছিল বৃত্তের বাইরে গিয়ে। বাজি রেখেছিল ছক্কা হাঁকাতে পারদর্শী অধিনায়ক শাই হোপ আর শেরফান রাদারফোর্ডের ওপর। সুপার ওভারের মোমেন্টাম নিজেদের করে নিয়েছিলেন তারা।
শুধু ওয়েস্ট ইন্ডিজ নয়, সুপার ওভারের ম্যাচগুলোতে সাধারণত প্রায় দেশই বাজি রাখে সেই ব্যাটারদের ওপর, যারা চার-ছক্কা হাঁকাতে পারদর্শী ও ইনফর্ম ব্যাটারদের ওপর। বাংলাদেশ সে তোয়াক্কা না করে ওপেনিং জুটিকেই প্রাধান্য দিয়েছে, যেন ৫০ ওভারের ম্যাচ খেলতে হবে। উইকেটে টিকে থাকতে হবে অনেকটা সময়। চার-ছক্কা নয়, চাই উইকেটে টিকে থাকা।
সুপার ওভারে রিশাদকে ব্যাটিংয়ে না পাঠানোয় অবাক হয়েছিলেন ক্যারিবীয়দের হয়ে সুপার ওভারে বল করা আকিল হোসেন। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘রিশাদ দারুণ ব্যাটিং করেছে। এরপরও তাকে সুপার ওভারে ব্যাটিংয়ে না পাঠানো আমাকে বেশ অবাক করেছে।’
সবমিলিয়ে আজ মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) দ্বিতীয় ওয়ানডেতে মূল ম্যাচ ও সুপার ওভারে কেমন ছিল দুদলের ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্স? দেখে নিন…
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ : ৫০ ওভারে ২১৩/৭ (সাইফ ৬, সৌম্য ৪৫, হৃদয় ১২, শান্ত ১৫, মাহিদুল ১৭, নাসুম ১৪, সোহান ২৩, মিরাজ ৩২*, রিশাদ ৩৯*; আকিল ১০-১-৪১-২, চেজ ১০-২-৪৪-০, পিয়েরে ১০-০-৪৩-০, মটি ১০-০-৬৫-৩, আথানেজ ১০-৩-১৪-২)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ : ৫০ ওভারে ২১৩/৯ (আথানেজ ২৮, কিং ০, কার্টি ৩৫, আগুস্ত ১৭, রাদারফোর্ড ৭, মোটি ১৫, চেজ ৫, গ্রেভস ২৬, আকিল ১৬, পিয়েরে ২*,হোপ ৫৩*; নাসুম ১০-০-৩৮-২, তানভীর ১০-০-৪২-২, রিশাদ ১০-০-৪২-৩, সাইফ ২-০-৯-১, মিরাজ ১০-১-৩৮-০, মুস্তাফিজ ৮-০-৪০-০)
সুপার ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ : ১ ওভারে ১০/১ (হোপ ৭*, রাদারফোর্ড ৩, কিং ০*; মুস্তাফিজ ১-০-১০-১)
সুপার ওভারে বাংলাদেশ : ১ ওভারে ৯/১ (সৌম্য ৩, সাইফ ২*, শান্ত ০*; আকিল ১-০-৮-১)