শিরোপা মিশনে ভারসাম্যপূর্ণ দল গড়েছে রাজশাহী ওয়ারিয়র্স
‘আমাদের ওপর ভরসা রাখুন, ভালো কিছু উপহার দেব আমরা’—রাজশাহী ওয়ারিয়র্সের প্রধান কোচ হান্নান সরকারের কণ্ঠে ছিল এমনই আত্মবিশ্বাসের সুর। এই আত্মবিশ্বাসের ভিত্তিটাও বেশ মজবুত। এক সময়ের জাতীয় দলের নির্বাচক জহুরির চোখে সাগর সেঁচে মুক্তা তোলার মতোই গড়েছেন এবারের দল। যাকে এক কথায় বলা যায়—ক্যালকুলেটিভ কিন্তু হাই-ইম্প্যাক্ট স্কোয়াড।
বিপিএলে একবারই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বাদ পেয়েছে রাজশাহী। চ্যাম্পিয়ন সেই দলের টিম ম্যানেজার ছিলেন হান্নান সরকার। এবার ওয়ারিয়র্সদের প্রধান কোচ তিনি। ভূমিকা বদলেছে, বেড়েছে দায়িত্ব। কিন্তু লক্ষ্য একটাই—রাজশাহী ওয়ারিয়র্সকে ফের চ্যাম্পিয়ন করা।
মাঠের লড়াইয়ের আগে অর্ধেক যুদ্ধ জয় করতে হয় নিলামের টেবিলে। দীর্ঘদিন পর বিপিএলে ফেরা নিলামে হান্নান সরকার দেখিয়েছেন সেই মুন্সিয়ানা। কেবল বড় নামের পেছনে না ছুটে, তিনি দল সাজিয়েছেন প্রয়োজন আর পারফরম্যান্সের মানদণ্ডে।
নিলাম শেষে স্কোয়াডের দুর্বলতাগুলো অণুবীক্ষণ যন্ত্রের মতো খুঁজে বের করে তা পূরণে দেখিয়েছেন চমক। ‘নেইম ভ্যালু’র চেয়ে ‘ম্যাচ উইনিং’ সামর্থ্যকে প্রাধান্য দেওয়ায় ক্রিকেট বোদ্ধাদের প্রশংসাও কুড়িয়েছে তার দল।
অভিজ্ঞতা আর তারুণ্যের মিশেলে গড়া হয়েছে রাজশাহীর স্কোয়াড। তারুণ্যের মেজাজ আর অভিজ্ঞদের ঠান্ডা মাথার পরিকল্পনা—দুইয়ে মিলে রাজশাহীর স্কোয়াড যেন একটা ‘কমপ্লিট প্যাক’। দলের হাল ধরতে প্রস্তুত মুশফিকুর রহিম, নাজমুল হোসেন শান্ত, তানজিদ হাসান তামিম, তানজিম হাসান সাকিব ও ইয়াসির আলী চৌধুরীর মতো পরীক্ষিত সৈনিকরা। অন্যদিকে, গতির ঝড় তুলে প্রতিপক্ষকে চমকে দিতে প্রস্তুত রিপন মন্ডল, জিসান আলম, আব্দুল গাফ্ফার সাকলাইন, মেহরাব হোসেন ও হাসান মুরাদের মতো তরুণ তুর্কিরা। নিজেদের প্রমাণের মঞ্চে এরা হয়ে উঠতে পারেন অদম্য।
বিদেশি খেলোয়াড় নির্বাচনেও রাজশাহী দেখিয়েছে দুরদর্শিতা। সাম্প্রতিক দিনে ফর্মের তুঙ্গে থাকা ক্রিকেটারদের ওপরই তারা বাজি ধরেছে। ভরসার প্রতীক হিসেবে দলে আছেন মোহাম্মদ নাওয়াজ, শাহিবজাদা ফারহান, বিনুরা ফার্নান্দো ও জিমি নিশামরা।
বিদেশি ক্রিকেটার নিয়ে বিপিএলে একটি শঙ্কা বরাবরের মতোই আছে। টুর্নামেন্টের মাঝপথে জাতীয় দলের দায়িত্ব পালন করতে দেশে ফিরে যাবেন জাতীয় দলে দায়িত্ব পাওয়া পাকিস্তানি ক্রিকেটাররা। সেই ‘রিস্ক ফ্যাক্টর’ মাথায় রেখেই পরিকল্পনা সাজিয়েছেন হান্নান সরকার। সে জন্য বিপিএলের মাঝপথে দলের সঙ্গে যোগ দেবেন অলরাউন্ডার জিমি নিশাম ও শ্রীলঙ্কান স্পিনার দাসুন হেমন্থ।
রাজশাহীর স্কোয়াডে দুইটি জিনিসের আধিক্য বেশ—একটি স্পিনার অন্যটি অলরাউন্ডার। বাংলাদেশের মতো কন্ডিশনে যেটি অনেক বেশি কার্যকরী। ঢাকা থেকে সিলেট কিংবা চট্টগ্রাম, স্পিন ধরে সবখানে। যেটি প্রতিপক্ষের জন্য মাথাব্যাথার কারণ। এসব কন্ডিশনে মোহাম্মদ নাওয়াজ, সন্দীপ লামিচানেরা হতে পারেন দারুণ কার্যকরী। এর সঙ্গে জিমি নিশাম, হোসাইন তালাত, মোহাম্মদ নাওয়াজরা সমান তালে বলের সঙ্গে ব্যাটও চালাতে পারেন। যেটি বাড়তি সুবিধা দেবে রাজশাহীকে।
রাজশাহীর স্কোয়াডের দিকে তাকালে একটি জিনিস বেশ স্পষ্ট হয়ে ওঠে—একই পণ্যে গোডাউন ভর্তি না করে বিভিন্ন পণ্যের সমারোহ ঘটিয়েছে তারা। মানে একই পজিশনের জন্য একগাদা ক্রিকেটার দলে না ভিড়িয়ে পজিশন দেখে ক্রিকেটার দলে ভিড়িয়েছে রাজশাহী।
রাজশাহীর ওপেনিং পজিশন মোটামুটি নির্ধারিত। রাজশাহীর হয়ে ইনিংস শুরু করতে নামবেন শাহিবজাদা ফারহান ও তানজিদ হাসান তামিম। তিন নম্বর পজিশনে দেখা যেতে পারে তরুণ জিসান আলমকে। চার নম্বর পজিশনটা অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর জন্য বরাদ্দ। পাঁচ নম্বরে ভরসা রাখা হবে অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিমের উপর। ছয় নম্বর পজিশনে বড় প্রতিপক্ষ ইয়াসির আলী চৌধুরী। সেক্ষত্রে বেঞ্চে বসে থাকতে হতে পারে আকবর আলীকে। অলরাউন্ডার কোটায় মোহাম্মদ নাওয়াজের একাদশে সুযোগ পাওয়াটা মোটামুটি নিশ্চিত। আট নম্বরে দেখা যাবে তাকে।
পেসার হিসেবে তানজিম হাসান সাকিব থাকবেন প্রথম পছন্দ হিসেবে। তার সঙ্গী হতে পারেন শ্রীলঙ্কান বিনুরা ফার্নান্দো ও পাকিস্তানি জাহান্দাদ খান। স্পেশালিস্ট স্পিনার হিসেবে দেখা যেতে পারে নেপালের লেগস্পিনার সন্দীপ লামিচানেকে।
খাতা-কলমের হিসেবে এবারের বিপিএলের অন্যতম সেরা স্কোয়াড রাজশাহীর। নিজেদের পজিশনে দারুণ কার্যকরী ওয়ারিয়র্সের ক্রিকেটাররা। এখন মাঠে পারফর্ম করার পালা। ঠিকঠাক মতো সেটি করতে পারলে এবার শিরোপা উদ্ধার করা কঠিন কিছু নয়।
রাজশাহী ওয়ারিয়র্সের স্কোয়াড
দেশি ক্রিকেটার : নাজমুল হোসেন শান্ত, তানজিদ হাসান তামিম, মুশফিকুর রহিম, তানজিম হাসান সাকিব, ইয়াসির আলী চৌধুরী, আকবর আলী, রিপন মন্ডল, জিসান আলম, আব্দুল গাফ্ফার সাকলাইন, মেহরাব হোসেন, হাসান মুরাদ, রবিউল হক, ওয়াসি সিদ্দিকী, শাকির এইচ শুভ্র, মোহাম্মদ রুবেল।
বিদেশি ক্রিকেটার : শাহিবজাদা ফারহান (পাকিস্তান), মোহাম্মদ নাওয়াজ (পাকিস্তান), হোসাইন তালাত (পাকিস্তান), বিনুরা ফার্নান্দো (শ্রীলঙ্কা), জিমি নিশাম (নিউজিল্যান্ড), সন্দীপ লামিচানে (নেপাল),জাহানদাদ খান (পাকিস্তান) ও দাসুন হেমন্থ (শ্রীলঙ্কা)।

নাজমুল সাগর