ঠাণ্ডা আর কান্নায় ভারি তুরস্ক-সিরিয়া, চলছে উদ্ধার অভিযান
সিরিয়ার সীমান্তবর্তী দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলে বড় ধরনের ভূমিকম্পে নির্বাক সেখানের মানুষ। নিহত ও নিখোঁজদের স্বজনের কান্নায় ভারি হয়ে উঠেছে পরিবেশ। এরই মধ্যে গতকাল রাতে তাপমাত্রা নেমে আসে হিমাঙ্কের নিচে। ফলে বাধাগ্রস্ত হয় উদ্ধার অভিযান। এদিকে, এই দুই দেশে নিহতের সংখ্যা মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত চার হাজার ৩০০ ছাড়িয়েছে। এই সংখ্যা আরও কয়েক গুণ বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। খবর রয়টার্সের।
মঙ্গলবার ভোর রাতে ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়া মানুষের চিৎকার শোনা যাচ্ছিল। তুরস্ক ও প্রতিবেশী উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ায় নিহত ও নিখোঁজদের স্বজনরা তাদের প্রিয়জনের জন্য কাঁদছেন। এরমধ্যে চলছে উদ্ধার অভিযান।
দক্ষিণাঞ্চলীয় হাতায় প্রদেশে ধ্বংসস্তূপের স্তূপের নিচে একজন মহিলার সাহায্যের জন্য ডাকতে শোনা যায়। পাশেই পড়ে ছিল প্রাণহীন এক শিশুর মরদেহ। বৃষ্টির মধ্যে কাঁদতে কাঁদতে, ডেনিজ ওরঙ নামে একজন স্থানীয় বাসিন্দা হতাশার মধ্যে মাথায় হাত বুলাচ্ছিলেন।
ডেনিজ বলেন, ‘তারা শব্দ করছে, কিন্তু কেউ আসছে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বিধ্বস্ত, আমরা বিধ্বস্ত। হে ঈশ্বর... তারা ডাকছে। তারা বলছে—আমাদের বাঁচাও, কিন্তু আমরা তাদের বাঁচাতে পারছি না। আমরা কীভাবে তাদের বাঁচাতে যাচ্ছি? সেখানে আজ সকাল থেকে কেউ নেই।’
তাপমাত্রা রাতারাতি হিমাঙ্কের কাছাকাছি নেমে যাওয়ায় ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়া ও গৃহহীনদের অবস্থা আরও খারাপ হয়ে পড়ে। হাতয়ের উত্তরে কাহরামানমারাসের অনেক পরিবার উষ্ণ থাকতে আগুনের চারপাশে জড়ো হয়েছিল। তারা নিজেদেরকে কম্বলে জড়িয়েছিল।
নেসেত গুলার তার চার সন্তানকে নিয়ে আগুনের চারপাশে বসে ছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমরা খুব কমই ঘর থেকে বের হয়েছি।’ নেসেত গুলার আরও বলেন, ‘এই বিপর্যয়ের মধ্যে আমরা ক্ষুধার্ত, আমরা তৃষ্ণার্ত। এটা দুঃখজনক।’
সোমবার ভোরে সাত দশমিক ৮ মাত্রার কম্পনে বড় বড় ভবন ধসে পড়ে। সে সময় ওই ভবনগুলোতে মানুষ ঘুমিয়েছিল। এর কয়েক ঘণ্টা পর সাত দশমিক ৬ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। এ সময় ব্লকগুলো ভেঙে দেয়, হাসপাতাল ধ্বংস হয় এবং আরও হাজার হাজার লোক আহত ও গৃহহীন হয়ে পড়ে।
মঙ্গলবার সকালে এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তুর্কি কর্তৃপক্ষ এই ভূমিকম্পে দেশটিতে দুই ৯০০ জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। সিরিয়ায় আরও এক হাজার ৪৪৪ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত করা হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, মৃতের এই সংখ্যা কয়েক গুণ বাড়তে পারে এবং তা বর্তমান সংখ্যার আটগুণে পৌঁছাতে পারে।