বন্যার্তদের বাঁচাতে আন্তর্জাতিক সাহায্যের আবেদন মিয়ানমারের জান্তাপ্রধানের
তিন বছর ধরে গৃহযুদ্ধের ক্ষত বয়ে বেড়ানো মিয়ানমারের হাজার হাজার নাগরিক এখন মারাত্মক বন্যায় জীবন ও সহায়-সম্বল রক্ষায় বিপর্যয়কর পরিস্থিতির মুখোমুখি। সেখানকার বন্যার্ত লোকজনের অবস্থা এতটাই নাজুক যে, এক বিরল ঘটনা হিসেবে মিয়ানমারের জান্তা সরকারপ্রধান আন্তর্জাতিক সাহায্যের জন্য আবেদন জানিয়েছেন। খবর এএফপির।
গত সপ্তাহের শেষভাগে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াগি’র প্রভাবে মিয়ানমার, ভিয়েতনাম, লাওস ও থাইল্যান্ডে সৃষ্টি হয় প্রচণ্ড বৃষ্টিপাত, সেই সঙ্গে দেখা দেয় আকস্মিক বন্যা। প্রাকৃতিক দুর্যোগে এই অঞ্চলে ইতোমধ্যে তিন শতাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন।
বন্যায় মিয়ানমারে দুই লাখ ৩৫ হাজার মানুষ তাদের বাড়িঘর ও সহায়-সম্বল ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। গতকাল শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) জান্তা সরকার এ তথ্য জানিয়েছে। ২০২১ সালে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা গ্রহণের পর গৃহযুদ্ধে জর্জরিত মিয়ানমার এখন মারাত্মক প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন।
মিয়ানমারের বহুল প্রচারিত গ্লোবাল নিউ লাইট সংবাদপত্রের তথ্য অনুসারে গতকাল শুক্রবার জান্তাপ্রধান মিন অং হ্লাইং বন্যার্তদের রক্ষায় আন্তর্জাতিক সাহায্যের আবেদন জানিয়ে বলেন, ‘দুর্গতদের রক্ষায় উদ্ধারকাজ চালাতে ও সাহায্যসামগ্রী পেতে সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশি দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করা এখন খুবই প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে।’
জান্তা সরকারপ্রধান আরও বলেন, ‘যত দ্রুত সম্ভব উদ্ধার অভিযান চালানো, ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া ও ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনকে পুনর্বাসন করতে ব্যবস্থা নেওয়া অত্যাবশ্যক হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
মিন অং হ্লাইং জানান, বন্যায় দেশটিতে এ পর্যন্ত ৩৩ জন প্রাণ হারিয়েছে। তবে দেশটির দমকল বিভাগ এর আগে জানিয়েছিল, বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৬ জনে।
মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর একজন মুখপাত্র জানান, বন্যাদুর্গত দেশের বেশকিছু এলাকার সঙ্গে যোগাযোগ হারিয়ে ফেলেছেন তারা। এ ছাড়া মান্দালয় অঞ্চলের একটি খনি এলাকায় ভূমিধসে বেশ কিছু লোকের প্রাণহানির বিষয়ে তদন্ত চলছে বলেও জানান ওই মুখপাত্র।
মিয়ানমারের সামরিক সরকার এর আগে বিদেশ থেকে সাহায্য গ্রহণে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল। গতবছর দেশটির পশ্চিমাঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় ‘মোচা’র আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বিদেশি সাহায্য সংস্থাগুলো উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতা চালাতে কাজ শুরু করলে প্রতিনিধিদের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দেয় জান্তা সরকার। সে সময় এই সিদ্ধান্তকে ‘অসম্মানজনক’ হিসেবে অভিহিত করেছিল জাতিসংঘ।