পাকিস্তানে ভারতের হামলার প্রতিক্রিয়ায় যা বলছেন বিশ্ব নেতারা

ভারত-শাসিত কাশ্মীরের পেহেলগামে গত ২২ এপ্রিল সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন পর্যটক নিহত হয়। এ ঘটনার পর থেকেই পরমাণু শক্তিধর প্রতিবেশী এই দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা ক্রমশ তীব্র হচ্ছে। ভারত ওই হামলার জন্য সরাসরি পাকিস্তানকে দায়ী করেছে, যদিও ইসলামাবাদ বরাবরই তাদের কোনো প্রকার সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করে আসছে। এ ঘটনার পর থেকেই প্রতিবেশী দুই দেশের মাঝে সীমান্ত উত্তেজনা ক্রমশ বেড়েছে। পারমাণবিক শক্তিধর এ দুই দেশে এখন যুদ্ধের মতো পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে।
এমন অবস্থায় ভারত বুধবার (৭ মে) ভোর রাতে পাকিস্তান ও পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের ৯টি স্থানে ২৪টি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এসব হামলায় অন্তত ৭০ জন নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে ভারত।
তবে পাকিস্তান জানিয়েছে, এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কমপক্ষে ২৬ বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৪৬ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন। এই পদক্ষেপকে ইসলামাবাদ ‘যুদ্ধ ঘোষণার শামিল’ হিসেবে অভিহিত করে এর কঠোর এবং উপযুক্ত জবাব দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে।
এসব ঘটনায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার নেতারা প্রতিক্রিয়া দুই দেশের পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। কেউ কেউ হামলা বন্ধ করে সংযম প্রদর্শনের কথাও জানিয়েছেন।
পাকিস্তানে ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলাকে ‘লজ্জাজনক’ উল্লেখ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘আমরা ওভাল অফিসের দরজা দিয়ে ঢোকার সময়ই খবরটা শুনেছি। আমি আশা করি, এটা দ্রুত শেষ হয়ে যাবে।’
পাকিস্তানে ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ঘটনায় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ভারত ও পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন। তিনি উভয় পক্ষকে ‘যোগাযোগের মাধ্যম খোলা রাখতে এবং উত্তেজনা এড়াতে’ আহ্বান জানিয়েছেন।
এক্স (সাবেক টুইটার)-এ দেওয়া এক বিবৃতিতে রুবিও জানান, তিনি পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন এবং ‘শান্তিপূর্ণ সমাধানের’ জন্য উভয় পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) ও আন্তর্জাতিক সীমান্ত পেরিয়ে পাকিস্তানে ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার খবরে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি উভয় দেশের কাছে ‘সর্বোচ্চ সামরিক সংযমের’ আহ্বান জানিয়েছেন।
গুতেরেসের মুখপাত্র ডুজারিক কঠোর ভাষায় সতর্ক করে বলেন, ‘ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক সংঘাত বিশ্ব কোনোভাবেই সমর্থন করে না জাতিসংঘ।’
এদিকে, পাকিস্তানে ভারতের সামরিক হামলাকে ‘দুঃখজনক’বলে অভিহিত করেছে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং বলেছেন, তারা চলমান পরিস্থিতি নিয়ে ‘উদ্বিগ্ন’এবং উভয় দেশকে ‘শান্ত থাকতে, সংযম প্রদর্শন করতে ও পরিস্থিতি আরও জটিল করতে পারে এমন পদক্ষেপ নেওয়া থেকে বিরত থাকতে’আহ্বান জানিয়েছেন।
ভারত ও পাকিস্তানকে সংযম দেখানোর আহ্বান জানিয়েছে ফ্রান্স। ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাঁ-নোয়েল বারো বুধবার টিএফ১ টেলিভিশনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, 'সন্ত্রাসবাদের অভিশাপ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে ভারতের ইচ্ছা আমরা বুঝি। তবে একইসঙ্গে আমরা ভারত ও পাকিস্তান—উভয় দেশকেই সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানাচ্ছি, যাতে পরিস্থিতি আরও না বাড়ে এবং অবশ্যই যেন বেসামরিক মানুষের সুরক্ষা নিশ্চিত হয়।'
জাপানের প্রধান মন্ত্রিপরিষদ সচিব ইয়োশিমাসা হায়াশি এক বিবৃতিতে বলেছেন, দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য আমরা ভারত ও পাকিস্তান উভয়কেই সংযম প্রদর্শন করে সংলাপের মাধ্যমে পরিস্থিতি স্থিতিশীল করার জন্য জোরালোভাবেেআহ্বান জানাচ্ছি।
এদিকে, ভারতের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে দেশটিতে নিযুক্ত ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত রিউভেন আজার বলেছেন, ভারতের আত্মরক্ষার অধিকারকে সমর্থন করে ইসরায়েল। সন্ত্রাসীদের জানা উচিত যে নিরপরাধদের বিরুদ্ধে তাদের জঘন্য অপরাধ থেকে লুকানোর কোনও জায়গা নেই।
অন্যদিকে, ভারতীয় বাহিনীর চালানো এই ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’কে স্বাগত জানিয়েছেন অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিনের (এআইএমআইএম) নেতা আসাদউদ্দিন ওয়াইসি।
এছাড়া ভারতের প্রধান বিরোধীদল কংগ্রেস পার্টির সভাপতি মল্লিকার্জুন খার্গে এই হামলায় সমর্থন জানিয়ে বলেছেন, এই সময়ের প্রয়োজনীয়তা হচ্ছে জাতীয় ঐক্য ও সংহতি।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলাকে ‘কাপুরুষোচিত আক্রমণ’ আখ্যায়িত করে কঠোর জবাব দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।