যেসব আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ব্যবহার করছে ইসরায়েল
ইসরায়েল একটি বহুস্তরীয় বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে, যা স্বল্প পাল্লা থেকে শুরু করে দীর্ঘ পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র, রকেট ও ড্রোন মোকাবিলায় সক্ষম। সম্প্রতি ইরানের হামলার পর এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাগুলো বেশ সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে, যদিও কিছু ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলি ভূখণ্ডে আঘাত হেনেছে।
১. আয়রন ডোম
আয়রন ডোম হলো ইসরায়েলের স্বল্প-পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, যা মূলত রকেট, মর্টার শেল ও ড্রোন প্রতিহত করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।
রাডার শনাক্তকরণ : এটি একটি রাডার দিয়ে সজ্জিত, যা উৎক্ষেপণের পরপরই একটি আগত প্রজেক্টাইল, তার গতিপথ ও গতিবিধি শনাক্ত করে।
নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র : রাডার থেকে প্রাপ্ত তথ্য একটি নিয়ন্ত্রণকেন্দ্রে পাঠানো হয়। এই কেন্দ্রটি দ্রুত গণনা করে যে, প্রজেক্টাইলটি ইসরায়েলি শহর বা সংবেদনশীল স্থাপনার জন্য হুমকিস্বরূপ কিনা। যদি হুমকিস্বরূপ না হয় ও জনবসতিহীন এলাকায় পড়ার সম্ভাবনা থাকে, তাহলে ইন্টারসেপ্টর ক্ষেপণাস্ত্র সংরক্ষণ করা হয়।
ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ : যদি হুমকিস্বরূপ হয়, তাহলে ক্ষেপণাস্ত্র-উৎক্ষেপণ ইউনিট থেকে তামির ইন্টারসেপ্টর ক্ষেপণাস্ত্র স্বয়ংক্রিয়ভাবে উৎক্ষেপণ করা হয়। প্রতিটি লঞ্চারে ২০টি ইন্টারসেপ্টর ক্ষেপণাস্ত্র থাকে।
লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস : ইন্টারসেপ্টর ক্ষেপণাস্ত্র আগত প্রজেক্টাইলের কাছাকাছি গিয়ে বিস্ফোরিত হয় ও সেটিকে ধ্বংস করে।
ইসরায়েলের চারপাশে ১০টি আয়রন ডোম ব্যাটারি ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে, যা মধ্যম আকারের শহরকে সুরক্ষা দিতে সক্ষম। এর সফলতার হার ৯০ শতাংশের বেশি বলে দাবি করা হয়।
২. ডেভিড’স স্লিং
ডেভিড’স স্লিং হলো ইসরায়েলের মধ্যম পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, যা ৪০ কিলোমিটার থেকে ৩০০ কিলোমিটার পর্যন্ত পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে পারে। এটি আয়রন ডোম ও অ্যারো সিস্টেমের মধ্যবর্তী স্তর হিসেবে কাজ করে।
লক্ষ্যবস্তু : এই সিস্টেম শত্রুর বিমান, ড্রোন, কৌশলগত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, মাঝারি থেকে দীর্ঘ পাল্লার রকেট ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।
স্টানার ক্ষেপণাস্ত্র : এটি ‘হিট-টু-কিল’ প্রযুক্তি ব্যবহার করে, অর্থাৎ এটি বিস্ফোরক ছাড়াই সরাসরি লক্ষ্যবস্তুকে আঘাত করে ধ্বংস করে। এটিতে উন্নত সেন্সর ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা থাকে, যা লক্ষ্যবস্তুকে সঠিকভাবে চিহ্নিত করে।
৩. অ্যারো সিস্টেম
অ্যারো সিস্টেম হলো ইসরায়েলের দীর্ঘ-পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, যা দুই হাজার ৪০০ কিলোমিটার পর্যন্ত পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে সক্ষম। এটি ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সবচেয়ে ওপরের স্তর। এর দুটি প্রধান সংস্করণ রয়েছে
অ্যারো ২ : এটি বায়ুমণ্ডলের ভেতরে কাজ করে ও আগত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রকে ধ্বংস করে।
অ্যারো ৩ : এটি বায়ুমণ্ডলের বাইরে লক্ষ্যবস্তুকে বাধা দেয়। এটি ‘হিট-টু-কিল’ প্রযুক্তি ব্যবহার করে ও সরাসরি লক্ষ্যবস্তুকে আঘাত করে ধ্বংস করে। অ্যারো ৩ হাইপারসনিক গতিতে উড়তে সক্ষম ও বিভিন্ন দিকে কৌশল পরিবর্তন করতে পারে, যা একে প্রচলিত ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার জন্য অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং করে তোলে।
অতিরিক্ত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা : প্যাট্রিয়ট ও আয়রন বিম
প্যাট্রিয়ট : এটি ইসরায়েলের পুরোনো প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার একটি অংশ ও বর্তমানে প্রধানত বিমান ও ড্রোন ভূপাতিত করতে ব্যবহৃত হয়।
আয়রন বিম : এটি একটি নতুন লেজার-ভিত্তিক সিস্টেম, যা বর্তমানে পরীক্ষাধীন রয়েছে। এর লক্ষ্য হলো ছোট ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন ও মর্টার শেলকে অনেক কম খরচে ধ্বংস করা।
এই বহুস্তরীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ইসরায়েলকে বিভিন্ন ধরনের আকাশপথে আসা হুমকি থেকে সুরক্ষা দিতে সাহায্য করে।

এনটিভি অনলাইন ডেস্ক