পাকিস্তানে ভারি বর্ষণে সৃষ্ট বন্যায় নিহত বেড়ে ৬৩

পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে বুধবার (১৬ জুলাই) থেকে শুরু হওয়া মুষলধারে বৃষ্টিপাতের ফলে সৃষ্ট বন্যায় গত ২৪ ঘণ্টায় কমপক্ষে ৬৩ জন নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন আরও ২৯০ জন। জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, বেশিরভাগ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে ভবন ধসে, বাকিরা ডুবে গিয়ে অথবা বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন।
শুক্রবার (১৮ জুলাই) দেশটির সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। খবর সংবাদমাধ্যম ডন ও বার্তা সংস্থা এএফপির।
জুনের শেষের দিকে বর্ষা শুরু হওয়ার পর থেকে পাকিস্তানে দেশব্যাপী মৃতের সংখ্যা প্রায় ১৮০ জনে পৌঁছেছে, যাদের অর্ধেকেরও বেশি শিশু।
পাঞ্জাবে বন্যা পরিস্থিতি ও জরুরি অবস্থা
রাজধানী ইসলামাবাদের পাশে অবস্থিত রাওয়ালপিন্ডি শহরের কর্তৃপক্ষ বৃহস্পতিবার জনগণকে ঘরে থাকার জন্য সরকারি ছুটি ঘোষণা করেছে। একই সঙ্গে, শহরের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া একটি নদীর তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে বলা হয়েছে।
বন্যার কারণে পাঞ্জাবজুড়ে বেশ কয়েকটি এক্সপ্রেসওয়ে বন্ধ হয়ে গেছে ও কয়েক ডজন ফ্লাইট বাতিল বা বিলম্বিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী মরিয়ম নওয়াজ বলেছেন, বেশ কয়েকটি এলাকায় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো সর্বোচ্চ প্রচেষ্টার সাথে কাজ করছে, বাসিন্দাদের নিরাপত্তা নির্দেশিকা মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন।
গত দিনে ৪০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের ফলে প্লাবিত চাকওয়াল শহরটিতে, ছবি ও ভিডিওতে বন্যার পানিতে আটকে পড়া মানুষদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করা উদ্ধারকারী নৌকাগুলোকে দেখা গেছে। সামরিক হেলিকপ্টারগুলোও প্রচণ্ড প্লাবিত এলাকায় ঘোরাফেরা করতে দেখা যাচ্ছে।
পাঞ্জাব কর্তৃপক্ষ সতর্ক করেছে, সপ্তাহান্তে আরও বৃষ্টিপাত ও আকস্মিক বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে। প্রদেশজুড়ে হাজার হাজার উদ্ধারকর্মীকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তন ও পাকিস্তানের ভঙ্গুরতা
প্রায় ২৫ কোটি জনসংখ্যার পাকিস্তান জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলির মধ্যে একটি। দেশটি দুটি প্রধান আবহাওয়া ব্যবস্থার প্রভাব বহন করে– একটি উচ্চ তাপমাত্রা ও খরার কারণ হতে পারে, অন্যটি মৌসুমি বৃষ্টিপাত নিয়ে আসে।
পাকিস্তানে ১৩ হাজারেরও বেশি হিমবাহ দ্রুত গতিতে গলে যাচ্ছে, যা দেশটির জন্য ভয়াবহ পরিবেশগত ও মানবিক বিপর্যয়ের ঝুঁকি তৈরি করছে।

২০২২ সালে পাকিস্তানে মৌসুমি বন্যায় দেশের এক-তৃতীয়াংশ এলাকা ডুবে যায়। এতে এক হাজার ৭০০ জন মানুষ প্রাণ হারান। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে দেশটির ৩০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছিল।
২০২৩ সালে জাতিসংঘের মহাসচিব পাকিস্তান সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, দেশটি জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক আর্থিক ব্যবস্থার কারণে দ্বিগুণ ক্ষতিগ্রস্ত। তিনি ভয়াবহ বন্যা থেকে পাকিস্তানকে পুনরুদ্ধারে সহায়তার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি জরুরি আহ্বান জানিয়েছিলেন।