যুদ্ধবিরতির পর গাজায় বিদেশি তত্ত্বাবধান প্রত্যাখ্যান ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীগুলোর

গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর হামাসসহ বিভিন্ন ফিলিস্তিনি সংগঠন স্পষ্ট জানিয়েছে, গাজার ভবিষ্যৎ প্রশাসন ও শাসনব্যবস্থা নির্ধারণ একান্তই ফিলিস্তিনিদের অভ্যন্তরীণ বিষয়।
স্থানীয় সময় শুক্রবার (১০ অক্টােবর) এক যৌথ বিবৃতিতে হামাস, ফিলিস্তিনি ইসলামিক জিহাদ (পিআইজে) এবং পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব প্যালেস্টাইন (পিএফএলপি) জানায়, ফিলিস্তিনিদের ঐক্য ও স্থিতিশীল প্রতিরোধই ইসরায়েলের গণউচ্ছেদ পরিকল্পনাকে ব্যর্থ করে দিয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, “আমরা আবারও স্পষ্ট করে বলছি—গাজার প্রশাসন ও প্রতিষ্ঠান পরিচালনার ধরন একটি অভ্যন্তরীণ ফিলিস্তিনি বিষয়, যা আমাদের জাতীয় প্রতিনিধিত্বশীল নেতৃত্বই নির্ধারণ করবে। কোনো বিদেশি তত্ত্বাবধান আমরা মেনে নেব না।”
গোষ্ঠীগুলো জানায়, যুদ্ধবিরতির পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনার জন্য তারা একটি জরুরি জাতীয় বৈঠকের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
তারা জানায়, “এই বৈঠক জাতীয় অবস্থানকে একীভূত করবে, একটি পূর্ণাঙ্গ কৌশল নির্ধারণ করবে এবং অংশীদারিত্ব, বিশ্বাসযোগ্যতা ও স্বচ্ছতার ভিত্তিতে আমাদের জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলো পুনর্গঠন করবে।”
তবে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের নেতৃত্বে থাকা ফাতাহ এই বৈঠকে অংশ নেবে কিনা, তা এখনও নিশ্চিত নয়।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষিত ২০ দফা গাজা শান্তি পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, একটি নতুন আন্তর্জাতিক সংস্থা “বোর্ড অব পিস” গঠন করা হবে, যা গাজার জন্য একটি অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসন তত্ত্বাবধান করবে।
এই সংস্থার নেতৃত্বে থাকবেন স্বয়ং ট্রাম্প, আর এর সদস্যদের মধ্যে থাকবেন সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারও।
তবে গাজার ভবিষ্যৎ শাসন কাঠামো কীভাবে হবে, তা এখনো অনিশ্চিত।
আল জাজিরা প্রাপ্ত দলিল অনুযায়ী, যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে হামাসকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ইসরায়েলি বন্দিদের মুক্তি দিতে হবে, তবে কোনো গণউৎসব বা মিডিয়া অনুষ্ঠান ছাড়াই।
চুক্তিতে আরও বলা হয়েছে, প্রতিদিন কমপক্ষে ৬০০টি ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করবে, পানি সরবরাহ কেন্দ্রগুলো পুনর্গঠন করা হবে এবং বাস্তুচ্যুতদের জন্য অস্থায়ী আশ্রয় শিবির গড়ে তোলা হবে।
শুক্রবার ইসরায়েলি সেনারা উপকূলীয় এলাকা থেকে সরে যেতে শুরু করলে হাজার হাজার বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি উত্তরের দিকে নিজেদের ভাঙা ঘরে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা শুরু করে।
গাজা সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর তারা গাজা সিটি থেকে ৬৩টি মরদেহ উদ্ধার করেছে। হাজারো মানুষ এখনো নিখোঁজ, অনেকেই ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে আছে।
আল জাজিরার সাংবাদিক হানি মাহমুদ বলেন, “গাজা সিটিতে প্রবেশের প্রধান সড়ক ধরে এগোতেই চারপাশের ধ্বংসস্তূপে শহরটিকে আর চেনা যাচ্ছিল না। আমরা যখন শহর ছেড়েছিলাম, অন্তত ১৫টি ভবন আংশিকভাবে দাঁড়িয়ে ছিল—কিন্তু ফিরে এসে সেগুলোও আর নেই।”
গাজা সরকারের মিডিয়া অফিস শুক্রবার জানিয়েছে, অবিলম্বে পুনর্গঠন কার্যক্রম শুরু করতে হবে।
চুক্তির প্রথম ধাপে ধ্বংসস্তূপ সরানোর যন্ত্রপাতি প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে, যা পুনর্গঠনের প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলো এই ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করবে, ফলে বিতর্কিত জিএইচএফকে কার্যত পাশে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
মানবাধিকার সংস্থাগুলো অভিযোগ করেছে, গত কয়েক মাসে শত শত ফিলিস্তিনি জিএইচএফ-এর নিয়ন্ত্রিত এলাকায় প্রবেশের চেষ্টা করতে গিয়ে নিহত হয়েছেন।
তবুও শুক্রবার জিএইচএফ জানিয়েছে, তারা তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাবে।
সংস্থার নির্বাহী পরিচালক জন অ্যাক্রি বলেছেন, “আমরা গাজার প্রয়োজনমতো মানুষদের জন্য খাদ্য ও সহায়তা পৌঁছে দিচ্ছি এবং এই মিশন থামবে না।”