ট্রাম্পের শুল্কনীতির বৈধতা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টে আইনি লড়াই শুরু
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধের সবচেয়ে বড় আইনি লড়াই দেশটির সুপ্রিম কোর্টে শুরু হয়েছে। আদালত এখন নির্ধারণ করবে, ট্রাম্প প্রশাসনের আরোপ করা বৈশ্বিক শুল্ক বা ট্যারিফগুলো আইনসঙ্গত কি না।
ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও কয়েকটি অঙ্গরাজ্যের অভিযোগ, ট্রাম্পের শুল্ক আরোপ ছিল ‘অবৈধ ও সাংবিধানিক ক্ষমতার সীমা অতিক্রম’। যদি আদালত তাদের পক্ষে রায় দেয়, তাহলে ট্রাম্পের পুরো বাণিজ্য কৌশল ধসে পড়বে এবং সরকারকে শত শত কোটি ডলারের শুল্ক ফেরত দিতে হতে পারে। খবর বিবিসির।
ট্রাম্প এই মামলাকে ‘মহাকাব্যিক লড়াই’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট সতর্ক করেছেন, যদি তিনি হারেন, তবে তা যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তাকে বিপদে ফেলবে এবং দেশের অর্থনীতি ‘বহু বছর বিশৃঙ্খলায়’ নিমজ্জিত হবে।
রোববার (২ নভেম্বর) তিনি জানান, নিজে আদালতে হাজির হবেন না — ‘আমি চাই না মামলার গুরুত্ব আমার উপস্থিতির কারণে কমে যাক। এটা আমার জন্য নয়, আমাদের দেশের জন্য।’
ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্কনীতিতে যুক্তরাষ্ট্র ও বিদেশের বহু প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, শিক্ষাসামগ্রী বিক্রেতা লার্নিং রিসোর্সেস জানিয়েছে, ২০২৫ সালে তাদের শুল্ক ব্যয় দাঁড়াবে ১৪ মিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় সাতগুণ বেশি।
জর্জিয়ার কোঅপারেটিভ কফিস নামের একটি ব্যবসায়িক সমবায়ের সহ-প্রতিষ্ঠাতা বিল হ্যারিস বলেন, ‘আমরা আশা করছি আদালত শুল্কগুলোকে অবৈধ ঘোষণা করবে, কিন্তু একই সঙ্গে প্রস্তুতও আছি— কারণ এই নীতিই হয়তো স্থায়ী হয়ে যাবে।’
হ্যারিস জানান, কোম্পানিকে ইতোমধ্যে অতিরিক্ত ঋণ নিতে হয়েছে, দাম বাড়াতে হয়েছে এবং কম মুনাফায় ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে হচ্ছে।
মামলাটি প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার সীমা নির্ধারণেও গুরুত্বপূর্ণ। ট্রাম্প ১৯৭৭ সালের ইন্টারন্যাশনাল এমার্জেন্সি ইকনমিক পাওয়ারস অ্যাক্ট (আইইইপিএ) ব্যবহার করে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে শুল্ক আরোপ করেছিলেন। এই আইনে ‘বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ’ অনুমোদিত হলেও ‘ট্যারিফ’ শব্দটি উল্লেখ নেই।
সমালোচকরা বলছেন, কংগ্রেস ছাড়া কোনো প্রেসিডেন্টের পক্ষে কর বা শুল্ক আরোপ করা সাংবিধানিকভাবে অবৈধ।
২০০-এরও বেশি ডেমোক্র্যাটিক কংগ্রেস সদস্য এবং রিপাবলিকান সিনেটর লিসা মারকাউস্কি সুপ্রিম কোর্টে একটি যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন। সেখানে তারা যুক্তি দেখিয়েছেন, প্রেসিডেন্টের জরুরি ক্ষমতা ব্যবহার করে বাণিজ্য চাপে ফেলার কোনো এখতিয়ার নেই।
ওয়েলস ফারগোর হিসাব অনুযায়ী, ইতোমধ্যে ৯০ বিলিয়ন ডলারের বেশি আমদানি শুল্ক আদায় হয়েছে, যার অর্ধেকের ভাগ এই মামলার ওপর নির্ভর করছে।
যদি আদালত ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে রায় দেয়, তবে সরকারকে এই অর্থ ফেরত দিতে হতে পারে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, আদালতের রায় যেকোনো দিকে যেতে পারে। আদালতের নয়জন বিচারপতির মধ্যে ছয়জন রিপাবলিকান, যার তিনজনকে ট্রাম্পই নিয়োগ দিয়েছিলেন। ফলে অনেকেই মনে করছেন আদালত ট্রাম্পের পক্ষে নমনীয় অবস্থান নিতে পারে।
তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আদালত প্রেসিডেন্ট বাইডেনের ছাত্রঋণ মওকুফ নীতির মতো কিছু উদ্যোগকে ‘অতিরিক্ত ক্ষমতার প্রয়োগ’ হিসেবে বাতিল করেছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসনের জুলাইয়ে করা বাণিজ্য চুক্তিও এখন ঝুলে আছে এই মামলার রায়ের ওপর।
ইউরোপীয় সংসদ জানিয়ে দিয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তের আগে তারা কোনো অনুমোদন দেবে না।
সুইজারল্যান্ডেও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে গেছে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের কারণে। দেশটির খ্যাতনামা চকলেট প্রস্তুতকারক ক্যামিল ব্লখ জানিয়েছে, তারা নতুন কোশার চকলেটে শুল্কের এক-তৃতীয়াংশ নিজ খরচে বহন করছে, ফলে পুরো লাভ শেষ হয়ে গেছে।
কোম্পানির প্রধান ড্যানিয়েল ব্লখ বলেন, ‘আদালত যদি এই শুল্ক বাতিল করে, অবশ্যই তা স্বাগত জানাব। তবে আমরা এখনও নিশ্চিত নই— এতে সমস্যার আসল সমাধান হবে কি না।’

এনটিভি অনলাইন ডেস্ক