দাঁতের ফিলিংয়ে পারদ ব্যবহার বন্ধের সিদ্ধান্ত
দাঁতের চিকিৎসায় ব্যবহৃত পারদ ভিত্তিক অ্যামালগামকে ২০৩৪ সালের মধ্যে ধাপে ধাপে বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ব নেতারা। সম্প্রতি জেনেভায় অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে এ লক্ষ্যে চুক্তি হয়েছে, যা দাঁতের চিকিৎসার ক্ষেত্রে একটি বৈশ্বিক পরিবর্তন আনবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। খবর এএফপির।
পারদ দূষণ থেকে মানব স্বাস্থ্য ও পরিবেশের সুরক্ষার লক্ষ্যে তৈরি আন্তর্জাতিক চুক্তি ‘মিনামাতা কনভেনশন অন পারদ’-এ পারদযুক্ত অ্যামালগামের ব্যবহার শেষ করার এই সময়সীমা ঘোষণা করা হয়েছে। সম্মেলনের সমাপনী বিবৃতিতে এই সিদ্ধান্তকে পারদ দূষণ কমানোর ক্ষেত্রে একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) পারদকে ‘মানব স্বাস্থ্যের জন্য বিষাক্ত’ উল্লেখ করে বিশ্বের ১০টি প্রধান স্বাস্থ্যঝুঁকির রাসায়নিকের মধ্যে একটি হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ইতোমধ্যেই কিছু দেশ দাঁতের অ্যামালগামে পারদের ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে। ২০১৩ সালে গৃহীত ও ২০১৭ সাল থেকে কার্যকর হওয়া এই আন্তর্জাতিক চুক্তিতে ১৫০টিরও বেশি দেশ সমর্থন জানিয়েছে।
সমাপনী বিবৃতিতে জানানো হয়, এবারের সম্মেলনে ২০৩৪ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী পারদ ভিত্তিক অ্যামালগাম ব্যবহার ধাপে ধাপে বন্ধ করার সংশোধনী অনুমোদন করা হয়েছে।
চুক্তিতে আগে থেকেই পারদযুক্ত ফিলিং ধাপে ধাপে বন্ধ করার নির্দেশনা ছিল। তবে আফ্রিকার দেশগুলোর একটি জোট ২০৩০ সাল থেকে পারদযুক্ত ফিলিংয়ের উৎপাদন, আমদানি ও রপ্তানি নিষিদ্ধ করার দাবি তোলে। সম্মেলনের উদ্বোধনী দিনে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্যমন্ত্রী রবার্ট এফ. কেনেডি জুনিয়র প্রশ্ন তোলেন, যখন ব্যাটারি, ওষুধ ও প্রসাধনীতে পারদের ব্যবহারকে বিপজ্জনক বলা হচ্ছে, তখন দাঁতের ফিলিংয়ে তা কীভাবে গ্রহণযোগ্য হয়?’ তিনি বলেন, নিরাপদ বিকল্প উপকরণ পাওয়া সত্ত্বেও সরকারগুলো স্বাস্থ্যসেবায় পারদযুক্ত যৌগের ব্যবহার অনুমোদন করছে, যা গ্রহণযোগ্য নয়।
তবে ইরান, ভারত ও যুক্তরাজ্যের মতো কিছু দেশ ২০৩০ সালের মধ্যে পারদ বন্ধের প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছিল। তাদের যুক্তি ছিল এত তাড়াতাড়ি বন্ধ করা সম্ভব না। পরে দেশগুলো একমত হয়ে ২০৩৪ সালের মধ্যে ধাপে ধাপে পারদ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়।
কনভেনশনের নির্বাহী সচিব মনিকা স্টাঙ্কিয়েভিচ বলেন, আমরা পারদের ইতিহাসে আরেকটি অধ্যায়ের দরজা খুলে দিয়েছি। পরস্পরকে বোঝার মাধ্যমে ও মতপার্থক্য দূর করে আমরা সারা বিশ্বের মানুষের জীবনে পরিবর্তন আনতে পারি।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ল্যাটিন আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান দেশগুলোর প্রতিনিধিরাও এই সিদ্ধান্তকে মানবস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য স্থায়ী সুবিধা নিয়ে আসার মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক বলে উল্লেখ করেছেন।
অন্যান্য উদ্যোগ
পারদ দূষণ থেকে মানবস্বাস্থ্য ও পরিবেশকে রক্ষা করতে সম্মেলনে মোট ২১টি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে—
পারদযুক্ত ত্বক ফর্সাকারী প্রসাধনীর অবৈধ বাণিজ্য ও উৎপাদন বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে দেশগুলো সম্মত হয়েছে। জানা যায়, এমন পণ্যের বিক্রি, বিশেষ করে অনলাইনে ব্যাপকভাবে বেড়েছে।
ছোট পরিসরের স্বর্ণের খনিতে পারদের ব্যবহার কমানোর দিকেও দেশগুলো এগোচ্ছে।
পিভিসি প্লাস্টিক তৈরির উপাদান ‘ভিনাইল ক্লোরাইড মনোমার’ (ভিসিএম) উৎপাদনে পারদমুক্ত অনুঘটক ব্যবহারের সম্ভাবনা নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
সম্মেলনের সভাপতি ওসভালদো আলভারেজ পেরেজ বলেন, নতুন এই উচ্চভিলাষী লক্ষ্য ঠিক করে পারদকে আরও এক ধাপ পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এনটিভি অনলাইন ডেস্ক