চাপের মুখে ডিজিটাল নীতিমালা শিথিল করতে যাচ্ছে ইইউ
ইউরোপীয় ও মার্কিন কোম্পানিগুলোর প্রবল চাপের মুখে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ও ডেটা গোপনীয়তা সংক্রান্ত বিধিমালার সংস্কার পরিকল্পনা করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। আজ বুধবার (১৯ নভেম্বর) এই নতুন পরিকল্পনা প্রকাশ করা হবে। খবর এএফপির।
প্রতিবেদনে বলা হয়, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমিয়ে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়ানোই এই সংস্কারের মূল লক্ষ্য। এর মাধ্যমে ইউরোপীয় ব্যবসাগুলো যেন তাদের আমেরিকান ও চীনা প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে এবং বিদেশি প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর ওপর তাদের নির্ভরতা কমে, সেদিকেও নজর দেওয়া হচ্ছে।
ইইউর প্রযুক্তি প্রধান হেনা ভিরকুনেন ও ডেটা সুরক্ষার দায়িত্বে থাকা বিচার বিষয়ক কমিশনার মাইকেল ম্যাকগ্রা বুধবার যৌথভাবে এই পরিকল্পনা পেশ করবেন। অবশ্য ইইউ দাবি করেছে, ডিজিটাল আইন সরলীকরণে ট্রাম্প প্রশাসনের কোনো প্রভাব নেই।
বিধিনিষেধের ওপর অতিরিক্ত নজর দিতে গিয়ে নতুন উদ্ভাবন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে ইউরোপের অনেক রাষ্ট্র উদ্বেগ জানিয়েছে। তবে ব্রাসেলস জোর দিয়ে বলছে, তারা ইউরোপীয় নাগরিকদের ডেটা সুরক্ষার অধিকার রক্ষায় অঙ্গীকারবদ্ধ।
মঙ্গলবার বার্লিনে অনুষ্ঠিত ফ্রাঙ্কো-জার্মান শীর্ষ বৈঠকে এআই প্রতিযোগিতায় নেতৃত্ব দেওয়ার ওপর জোর দেওয়া হয়।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেন, ইউরোপ মার্কিন ও চীনা প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর ওপর নির্ভরশীল বা তাদের ‘অধীনস্থ’ হতে চায় না।
বিশ্বজুড়ে ইইউর আইনগুলোর প্রভাব বা তথাকথিত ‘ব্রাসেলস ইফেক্ট’ নিয়ে এক সময় গর্ব করা হতো। কিন্তু এখন আইন প্রণেতা ও অধিকার কর্মীরা আশঙ্কা করছেন, ইইউ হয়তো বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর ওপর নজরদারি থেকে পিছু হটছে।
ইইউর নির্বাহী বিভাগ তাদের যুগান্তকারী ডেটা সুরক্ষা বিধি ও গত বছর কার্যকর হওয়া এআই আইনে পরিবর্তন আনার কথা ভাবছে। আজ এমন একটি প্রস্তাব থাকতে পারে, যা প্রায় সব ইউরোপীয়র জন্য সুখবর বয়ে আনবে। এতে থাকবে ওয়েবসাইটের বিরক্তিকর ‘কুকি ব্যানার’ সমস্যার সমাধান, যেখানে ব্যবহারকারীদের ট্র্যাকিং করার জন্য বারবার অনুমতি চাওয়া হয়।
খসড়া নথি ও ইইউ কর্মকর্তাদের মতে, ব্রাসেলসের পরিকল্পনায় রয়েছে- ব্যক্তিগত তথ্যের সংজ্ঞা এবং কোম্পানিগুলো তা কীভাবে ব্যবহার করবে, তা নতুন করে নির্ধারণ করা। উদাহরণ হিসেবে বলা হচ্ছে, ‘বৈধ স্বার্থে’ এআই মডেল প্রশিক্ষণে ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া।
কিন্তু অধিকার কর্মীরা সতর্ক করে বলছেন, এতে ব্যবহারকারীর গোপনীয়তা ক্ষুণ্ন হতে পারে। উচ্চ-ঝুঁকিপুর্ণ এআই সংক্রান্ত অনেক নীতিমালার বাস্তবায়ন এক বছর স্থগিত রাখা। বিশেষ করে যে সব এআই মডেল নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য বা নাগরিকদের মৌলিক অধিকারের জন্য বিপদ হতে পারে, সেগুলোর ক্ষেত্রে এই ছাড় দেওয়া হবে।
ফ্রান্সের এয়ারবাস এবং জার্মানির লুফথানসা ও মার্সিডিজ-বেঞ্জসহ ইউরোপের বড় বড় কোম্পানিগুলো গত জুলাই মাসে এআই আইন স্থগিত করার আহ্বান জানিয়েছিল। তাদের সতর্কবার্তা ছিল, এই আইনের ফলে উদ্ভাবন থমকে যেতে পারে।
অবশ্য ব্রাসেলস জোর দিয়ে বলছে, ইউরোপীয় ব্যবহারকারীদের তথ্যের গোপনীয়তা সুরক্ষিত থাকবে।
তবে এই সংস্কার কার্যকর করা খুব একটা সহজ হবে না। কারণ, এর জন্য ইইউ পার্লামেন্ট ও সদস্য রাষ্ট্র উভয়ের অনুমোদনের প্রয়োজন হবে।

এনটিভি অনলাইন ডেস্ক