একাধিক শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করল ইসরায়েল
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে সংঘটিত হামলা প্রতিরোধে চরম ব্যর্থতার দায়ে কয়েকজন শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী (আইডিএফ)। এছাড়াও একাধিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে তিরস্কার ও শাস্তি দেওয়া হয়েছে।
আজ সোমবার (২৪ নভেম্বর) ঘোষণা করা বরখাস্তের তালিকায় সামরিক গোয়েন্দা বিভাগ, অপারেশন বিভাগ এবং দক্ষিণ কমান্ডের দায়িত্বে থাকা জেনারেলরা রয়েছেন—যারা গাজার নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন। খবর আল জাজিরার।
ইসরায়েলি সরকার এখনও হামলার ব্যাপারে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শুরু করেনি। এর মধ্যেই আইডিএফ রোববার (২৩ নভেম্বর) এক বিবৃতিতে জানায়, বেশ কিছু কর্মকর্তা রিজার্ভ ডিউটি থেকে অব্যাহতি পাচ্ছেন এবং তারা আর সামরিক বাহিনীতে থাকবেন না।
আইডিএফ প্রধান ইয়াল জামির বলেন, ‘৭ অক্টোবর আইডিএফ তার প্রধান দায়িত্ব—ইসরায়েলের নাগরিকদের সুরক্ষা—পালনে ব্যর্থ হয়েছে। এটি ভয়াবহ ও কাঠামোগত ব্যর্থতা।’
জামির আরও বলেন, ওই দিনের শিক্ষনীয় বিষয়গুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং ভবিষ্যতে সেগুলোই পথনির্দেশক হবে।
যেসব কর্মকর্তার রিজার্ভ দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে আছেন- গোয়েন্দা বিভাগের সাবেক প্রধান, অপারেশন বিভাগের সাবেক প্রধান, দক্ষিণ কমান্ডের সাবেক প্রধান। এরা আগেই সক্রিয় দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেছিলেন, কিন্তু রিজার্ভে ছিলেন।
বর্তমান গোয়েন্দা বিভাগের প্রধানকে তিরস্কার করা হয়েছে। তিনি ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর অপারেশন ডিভিশনের প্রধান ছিলেন। তিনি ২০২৮ সালে মেয়াদ শেষ হওয়া পর্যন্ত দায়িত্বে থাকবেন, এরপর নিজের অনুরোধে অবসরে যাবেন।
অপর কয়েকজন অফিসারকে আনুষ্ঠানিকভাবে সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে। একজনকে সেনাবাহিনী থেকে সেবা শেষ করার সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে। আরেকজন নিজেই পদত্যাগ করেছেন।
খবরে বলা হয়, হামাসের ড্রোন ও প্যারাগ্লাইডার হামলা প্রতিরোধে ব্যর্থ হওয়ায় ইসরায়েলি বিমানবাহিনীর প্রধানকেও তিরস্কার করা হয়েছে। নৌবাহিনীর বর্তমান প্রধানের বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ আনা হয়েছে।
এই শাস্তিমূলক পদক্ষেপগুলো এসেছে যখন ইসরায়েলে জবাবদিহির দাবিতে জনরোষ বাড়ছে। শনিবার হাজারো মানুষ তেল আবিবে বিক্ষোভ করে একটি রাষ্ট্রীয় তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি জানায়। বিরোধী নেতারাও এতে যোগ দেন।
দুই সপ্তাহ আগে আইডিএফ প্রধান জামির ‘ব্যবস্থাগত তদন্ত’ শুরুর আহ্বান জানান।
কিন্তু ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু নিজের দায়িত্ব অস্বীকার করে কোনও গভীর তদন্ত শুরু করতে রাজি নন।
ইসরায়েলের হিসাব অনুযায়ী, ৭ অক্টোবরের হামলায় প্রায় এক হাজার ২০০ মানুষ নিহত হয় এবং প্রায় ২৫০ জনকে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয়।
এর জেরে ইসরায়েল দুই বছর ধরে স্থল ও আকাশ অভিযান চালিয়ে গাজায় ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ সৃষ্টি করে, যেখানে স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের হিসাবে নিহতের সংখ্যা ৬৯ হাজার ছাড়িয়েছে।
গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ইসরায়েল ও হামাস যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হলেও প্রথম ধাপেই অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে।
ইসরায়েল প্রতিদিন গাজায় হামলা চালিয়ে যুদ্ধবিরতির শর্ত লঙ্ঘন করছে বলে অভিযোগ, অন্যদিকে ইসরায়েল ও হামাস পরস্পরকেই দোষারোপ করছে।
গাজা কর্তৃপক্ষ কাতার, তুরস্ক, মিশর ও যুক্তরাষ্ট্রকে ইসরায়েলের লঙ্ঘন বন্ধে চাপ প্রয়োগের আহ্বান জানিয়েছে। এসব হামলায় ইতোমধ্যেই শত শত ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।

এনটিভি অনলাইন ডেস্ক