তালেবান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভারত সফরে কী সম্পর্ক জোরদার হবে?
আফগানিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি দ্বিপক্ষীয় অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদারের লক্ষ্যে ছয় দিনের সফরে গতকাল বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) ভারতে পৌঁছেছেন। ২০২১ সালে তালেবানের দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় আসার পর গোষ্ঠীটির কোনো শীর্ষ নেতার এটাই প্রথম ভারত সফর। খবর রয়টার্স ও বিবিসির।
তালেবান প্রশাসনকে এখন পর্যন্ত রাশিয়া ছাড়া আর কোনো দেশ স্বীকৃতি দেয়নি। আফগানিস্তানের বর্তমান প্রশাসনের সদস্যদের ওপর জাতিসংঘের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা, সম্পদ জব্দসহ নানা নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির বিরুদ্ধেও এই নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু বিশেষ বিবেচনায় তাঁকে ভারত সফরের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
আঞ্চলিক শক্তিগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক বাড়িয়ে কূটনৈতিক স্বীকৃতি অর্জনের জন্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছে আফগানিস্তান। ধারণা করা হচ্ছে, আমির খান মুত্তাকি ভারত সফরে এই প্রচেষ্টায় জোর দিচ্ছেন। তিনি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করসহ দেশটির অন্যান্য কর্মকর্তার সঙ্গে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক বিষয় নিয়ে বৈঠক করবেন।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ আমির খান মুত্তাকিকে এই সফরের অনুমতি দিয়েছে জানিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়াল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লিখেছেন, ‘আমরা তাঁর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ও আঞ্চলিক বিষয়ে গঠনমূলক আলোচনা করতে আগ্রহী।’
মুত্তাকি ভারতীয় ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের সঙ্গেও দেখা করবেন বলে জানা গেছে। এ ছাড়া তাঁর তাজমহল ও একটি মাদ্রাসা পরিদর্শনের কথা রয়েছে।
ভারত সফরের আগে মুত্তাকি রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে আফগানিস্তানের প্রতিবেশী দেশগুলোর কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে অংশগ্রহণকারী কূটনীতিকেরা কাবুলের অদূরে অবস্থিত বাগরাম ঘাঁটি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার অভিপ্রায়ের বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থানের কথা জানিয়েছেন।
ভারত ও আফগানিস্তানের মধ্যে ঐতিহাসিকভাবে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু তালেবান ক্ষমতায় আসার পর ভারত সরকার তাদের স্বীকৃতি দেয়নি। এমনকি ২০২১ সালে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটি থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পর কাবুলে নিজেদের দূতাবাস বন্ধ করে দেয় নয়াদিল্লি। যদিও বছর খানেক পর ভারত সীমিত পরিসরে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আফগানিস্তানে একটি মিশন খোলে। এর মাধ্যমে প্রধান বাণিজ্য, চিকিৎসা ও মানবিক সহায়তা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। এর পর থেকে ভারতীয় কর্মকর্তারা তালেবান নেতাদের সঙ্গে কয়েক দফা দ্বিপক্ষীয় আলোচনাও করেন। কিন্তু এতকিছুর পরেও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, তালেবান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভারত সফরে কী সম্পর্ক জোরদার হবে?
মুত্তাকির সফর এমন এক সময় হচ্ছে যখন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ের স্টারমারও ভারতে দ্বিপক্ষীয় সফরে রয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর এটাই কিয়ের স্টারমারের প্রথম ভারত সফর। তার সঙ্গে রয়েছে প্রতিনিধিদের একটা বড় দল। গত জুলাই মাসে ভারত ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর হয়; সেই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এই সফরের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। মুম্বাইয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তার ইতোমধ্যে সাক্ষাৎ হয়েছে, যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনও হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা, প্রযুক্তি, ইনভেস্টমেন্ট, সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানসহ একাধিক বিষয়।

এনটিভি অনলাইন ডেস্ক