নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে মামদানির ঐতিহাসিক জয়, সামনে কঠিন পরীক্ষা
নিউইয়র্ক সিটির নতুন নির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানি নানা দিক থেকেই ইতিহাস গড়েছেন। তিনি শহরের ১৮৯২ সালের পর সর্বকনিষ্ঠ মেয়র, প্রথম মুসলিম মেয়র এবং প্রথম আফ্রিকায় জন্ম নেওয়া মেয়র হতে যাচ্ছেন।
মাত্র ৩৪ বছর বয়সে মামদানি রাজনীতির মঞ্চে নামেন প্রায় অপরিচিত, অল্প তহবিল এবং প্রাতিষ্ঠানিক সমর্থন ছাড়াই। এই অবস্থায় সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুয়োমো এবং রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়াকে হারিয়ে তার জয় সত্যিই অবিশ্বাস্য।
তবে এর চেয়েও বড় বিষয় হলো— তিনি ডেমোক্রেটিক পার্টির সেই তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধি, যারা দীর্ঘদিন ধরে খুঁজছিল এক নতুন প্রগতিশীল নেতৃত্ব। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্বচ্ছন্দ, তরুণ, আকর্ষণীয় এই রাজনীতিক খোলাখুলিভাবে বামপন্থী নীতি— যেমন বিনামূল্যে শিশুসেবা, গণপরিবহন সম্প্রসারণ এবং বাজার ব্যবস্থায় সরকারি হস্তক্ষেপ— সমর্থন করে আসছেন। খবর বিবিসির।
তবে সমালোচকরা বলছেন, এমন একজন ‘ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্ট’ প্রার্থী মার্কিন রাজনীতিতে বৃড় পরিসরে টিকতে পারবেন না। রিপাবলিকানরা তাকে তুলে ধরছেন ডেমোক্র্যাটদের “অতি-বাম” চেহারা হিসেবে। কিন্তু মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) নিউইয়র্ক সিটিতে মামদানি ছিলেন বিজয়ী।
কুয়োমোর মতো প্রভাবশালী পরিবারের উত্তরাধিকারী রাজনীতিবিদকে হারিয়ে তিনি ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রতিষ্ঠিত গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে তরুণ প্রজন্মের এক বড় জয় এনে দিয়েছেন। এই নির্বাচনের ফলে মামদানি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বিপুল আলোচনার জন্ম দিয়েছেন।
তবে এখন তার সামনে রয়েছে কঠিন বাস্তবতা। আগের মেয়র বিল দে ব্লাসিও অসমতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, কিন্তু ক্ষমতার সীমাবদ্ধতায় আটকে গিয়েছিলেন। মামদানিকেও সেই সীমাবদ্ধতার সঙ্গেই লড়তে হবে।
নিউইয়র্কের গভর্নর ক্যাথি হোকুল ইতোমধ্যেই ঘোষণা দিয়েছেন, মামদানির প্রস্তাবিত কর বৃদ্ধির পরিকল্পনার সঙ্গে তিনি একমত নন। তাছাড়া বাণিজ্যিক মহল, যাদের বিরুদ্ধে মামদানি কঠোর অবস্থান নিয়েছেন, তাদের সঙ্গেও মামদানিকে কোনো না কোনোভাবে সমঝোতায় পৌঁছাতে হবে।
গাজা যুদ্ধ নিয়ে ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা এবং প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে গ্রেপ্তারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মামদানি। ভবিষ্যতে সেটি বাস্তবায়ন করতে হলে তাকে আন্তর্জাতিক ও কূটনৈতিক চাপের মুখেও পড়তে হতে পারে।
এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ রিপাবলিকানরা ইতোমধ্যেই মামদানিকে ‘সোশ্যালিস্ট হুমকি’ হিসেবে তুলে ধরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। নিউইয়র্কের অর্থনীতি বা অপরাধের হার নিয়ে সামান্য কোনো ব্যর্থতাকেও তারা বড় করে দেখাতে চাইবেন।
অন্যদিকে, সিনেটর চাক শুমারের মতো ডেমোক্র্যাট নেতারাও মামদানির প্রচারণায় অংশ নেননি। ফলে দলে নেতৃত্বের আস্থা অর্জনও তার জন্য একটি চ্যালেঞ্জ।
তবু মামদানির জন্য সুযোগও রয়েছে। অতীতের রাজনৈতিক বোঝা না থাকায় তিনি নতুনভাবে নিজের ভাবমূর্তি গড়ে তুলতে পারবেন। আর ট্রাম্পের সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক সংঘাত হলে, সেটি তার জাতীয় পরিচিতি আরও বাড়াবে।
এদিন শুধু নিউইয়র্ক নয়, নিউ জার্সি ও ভার্জিনিয়াতেও গভর্নর নির্বাচন হয়েছে এবং উভয় রাজ্যেই ডেমোক্র্যাটরা জয়ী। অর্থাৎ মামদানি যেমন প্রগতিশীল, তেমনি দলটির মধ্যপন্থী প্রার্থীরাও জয় পেয়েছেন।
মামদানি বলেছেন, ‘ডেমোক্রেটিক পার্টি এমন হওয়া উচিত যেখানে সব ধরনের মতের মানুষ নিজেদের দেখতে পায়। আমাদের ঐক্য আসে যাদের জন্য আমরা লড়ি— সেই শ্রমজীবী মানুষের মধ্য দিয়ে।’
এখন দেখা যাক, নিউইয়র্কের তরুণ এই মেয়র তার উচ্চাকাঙ্ক্ষী প্রতিশ্রুতিগুলো কতটা বাস্তবায়ন করতে পারেন এবং তিনি কেমনভাবে সামলান বিশ্বের অন্যতম বড় নগরীর নেতৃত্বের ভার।

এনটিভি অনলাইন ডেস্ক