এমবাপ্পের জাদুতে জয়ে ফিরল রিয়াল মাদ্রিদ
টানা তিন ম্যাচ জয়হীন থাকার চাপ নিয়ে মাঠে নেমেছিল রিয়াল মাদ্রিদ। তার ওপর আবার অলিম্পিয়াকোসের বিপক্ষে শুরুতেই গোল হজম করে বসে লস ব্লাঙ্কোরা। সবকিছুই যেন তখন অন্যরকম মনে হচ্ছিল মাদ্রিদ সমর্থকদের। সেই মুহূর্তে দলের ভার নিজের কাঁধে তুলে নিলেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। যদিও ঘরের মাঠে লড়াই জমিয়ে তুললো অলিম্পিয়াকোস। তবে জয় নিয়েই ঘরে ফিরেছে জাবি আলোনসোর দল।
বুধবার (১৬ নভেম্বর) দিনগত রাতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ম্যাচে অলিম্পিয়াকোসের মাঠে তাদের বিপক্ষে ৪-৩ গোলের জয় তুলে নিয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। ম্যাচে মাদ্রিদের হয়ে সবগুলো গোল করেছেন এমবাপ্পে।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ আটে সরাসরি খেলা নিয়ে যে শঙ্কা তৈরি হয়েছিল মাদ্রিদের সেটি উড়িয়ে দিল এই জয়ে। পাঁচ ম্যাচে চার জয় আর এক হারে মাদ্রিদের পয়েন্ট ১২। এতে টেবিলের পঞ্চম স্থানে উঠে এসেছে প্রতিযোগিতাটির সফলতম ক্লাবটি।
স্বাগতিক অলিম্পিয়াকোসের বিপক্ষে রিয়ালের শুরুটা হয় দারুণ। ম্যাচের তৃতীয় মিনিটেই এগিয়ে যেতে পারত তারা। তবে মাদ্রিদকে হতাশ করেন অলিম্পিয়াকোসের গোলরক্ষক।
খেলার বিপরীতে গিয়ে ম্যাচের অষ্টম মিনিটে প্রথম আক্রমণেই গোল পেয়ে যায় অলিম্পিয়াকোস। বক্সের বাইরে নিজেদের মধ্যে বল দেওয়া-নেওয়া করতে করতে আচমকা শট নেন পর্তুগিজ মিডফিল্ডার চিকিনিয়ো। দূরের পোস্ট ঘেষে যাওয়া তার নিচু শট ঝাপিয়ে পড়েও নাগাল পাননি রিয়ালের গোলরক্ষক আন্দ্রে লুনিন।
শুরুতে গোল হজম করে রিয়াল যেন তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠে। একের পর এক আক্রমণ শাণাতে থাকে এমবাপ্পে-ভিনিসিয়াস জুনিয়ররা। ২২ মিনিটে পায় গোলের দেখা। মাঝ মাঠ থেকে থ্রু বল বাড়ান ভিনিসিয়ুস। সেই বল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ডি-বক্সের বাইরে থেকে নিচু শটে বল জালে পাঠান এমবাপ্পে।
এরপর যেন অলিম্পিয়াকোসের জন্য দুঃস্বপ্ন হয়ে দেখা দেন এমবাপ্পে। পরের পাঁচ মিনিটের মধ্যে আরও দুইবার বল জড়ান স্বাগতিকদের জালে।
ম্যাচের ৪৩ মিনিটে ডানদিক থেকে বক্সে ক্রস বাড়ান আর্দা গুলার। ফাঁকায় বল পেয়ে হেডে জাল কাপান ফরাসি ফরোয়ার্ড এমবাপ্পে। এরপর ২৯ মিনিটে মাঝমাঠ থেকে ক্রস বাড়ান এডুয়ার্ডো কামাভিঙ্গা। সেই পাস ধরে অফসাইডের ফাঁদ ভেঙে কোনাকুনি শটে ব্যবধান বাড়ান বিশ্বকাপ জয়ী ফরোয়ার্ড।
এবারের চ্যাম্পিয়ন্স লিগে এ নিয়ে দ্বিতীয়বার হ্যাটট্রিকের দেখা পেলেন এমবাপ্পে। অলিম্পিয়াকোসের বিপক্ষে এই হ্যাটট্রিকে গড়েছেন একটি রেকর্ডও। এদিন হ্যাটট্রিক করতে এমবাপ্পের সময় লাগে ৬ মিনিট ৪২ সেকেন্ড। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ইতিহাসে এটি দ্বিতীয় দ্রুততম হ্যাটট্রিক। ৬ মিনিট ১৩ সেকেন্ডের হ্যাটট্রিকে সবার ওপরে আছেন লিভারপুল ফরোয়ার্ড মোহাম্মেদ সালাহ।
প্রথমার্ধেই আরও একবার অলিম্পিয়াকোসের জাল কাঁপিয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদ। কিন্তু ভিনিসিয়ুসের সেই গোল বাতিল হয়ে যায় অফসাইডের কারণে। আর কামাভিঙ্গা হতাশ হন গোলবারের বাধায়।
দ্বিতীয়ার্ধে মাঠে নেমে ব্যবধান কমায় অলিম্পিয়াকোস। ম্যাচের ৫২ মিনিটে ব্যবধান কমান মেহদি তারেমি। হেডে গোলটি করেন ইরানের ফরোয়ার্ড।
ম্যাচের ৫৯তম মিনিটে নিজের ও দলের চতুর্থ গোলটি করে অলিম্পিয়াকোসের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেন এমবাপ্পে। এই গোলে অবদান ছিল ভিনিসিয়ুসের। সতীর্থের উঁচু করে বাড়ানো থ্রু বল ধরে একজনকে কাটিয়ে বক্সে ঢুকে কাটব্যাক করেন তিনি আর আলতো শটে ব্যবধান বাড়ান এমবাপ্পে।
এ নিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের এবারের আসরে পাঁচ ম্যাচে ৯ গোল করে সবার ওপরে মাদ্রিদের ফরাসি ফরোয়ার্ড এমবাপ্পে। চলতি মৌসুমে মাদ্রিদের হয়ে তার মোট গোল হলো ২২টি।
ম্যাচের ৮১ মিনিটে আবারও গোল করে ম্যাচ জমিয়ে তোলে অলিম্পিয়াকোস। বাঁ দিক থেকে সতীর্থের ক্রসে হেডে স্কোরলাইন ৪-৩ করেন মরক্কোর ফরোয়ার্ড এল কাবি।
শেষ দিকে আরও কয়েকটি সুযোগ তৈরি করলেও গোলের দেখা পায়নি স্বাগতিকরা। রক্ষণ সামলে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে জাবি আলোনসোর শিষ্যরা।

স্পোর্টস ডেস্ক