দুই ঘণ্টার বৈঠকে কী কথা হলো কিম-পুতিনের?
রাশিয়া সফরে রয়েছেন উত্তর কোরিয়ার শীর্ষ নেতা কিম জং উন। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন কিম। দেশটির মহাকাশযান উৎক্ষেপণ কেন্দ্র ভস্তোচনি কসমোড্রোমে অনুষ্ঠিত হয়েছে দুই দেশের শীর্ষ নেতার এই বৈঠক। দুই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলা বৈঠকে সম্পর্ক আরও ভালো করার বিষয়ে কথা হয়েছে। খবর এএফপির।
আজ বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) প্রকাশিত প্রতিবেদনে ফরাসি সংবাদ সংস্থাটি জানিয়েছে, উত্তর কোরিয়ার শীর্ষ নেতা আজকের বৈঠকে মস্কোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সর্বদা রাশিয়ার সঙ্গে থাকার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন তিনি।
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে আগ্রাসন চালায় রাশিয়া। এরপর থেকেই পশ্চিমাদের কাছে অনেকটা নির্বাসিত রাশিয়া। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা বা শত্রুভাবাপন্ন দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা চালিয়ে আসছে।
বৈঠকে পুতিন জানান, কিমকে রাশিয়ায় দেখে তিনি অত্যন্ত আনন্দিত। মস্কো পিয়ংইয়ংকে স্যাটেলাইট তৈরিতে সহায়তা করতে পারে বলেও জানান রুশ প্রেসিডেন্ট। সামরিক সহযোগিতা নিয়ে দুই দেশ আলোচনা করতে পারে, বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন পুতিন।
পুতিনের উদ্দেশে কিম বলেন, ‘দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নে উত্তর কোরিয়ার দিক থেকে এক নম্বর পজিশনে থাকবে রাশিয়া।’ রাশিয়া আধিপত্যবাদী শক্তির মুখোমুখি হচ্ছে বলেও জানান কিম।
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম কিমের উদ্ধৃতি দিয়ে জানায়, উত্তর কোরিয়ার শীর্ষ নেতা বলেন, ‘আমরা সর্বদা রাশিয়ান সরকারের গৃহীত সমস্ত পদক্ষেপে পূর্ণ ও নিঃশর্ত সমর্থন প্রকাশ করেছি। আমি নিশ্চিত করছি, আমরা সর্বদা রাশিয়ার সঙ্গে থাকব।’
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থাগুলো জানিয়েছে, কিমের সম্মানে একটি আনুষ্ঠানিক নৈশভোজের আয়োজন করা হয়েছে। এই নৈশভোজে যাওয়ার আগে দুই দেশের শীর্ষ নেতা মুখোমুখি বসে প্রায় দুই ঘণ্টা বৈঠক করেন। পাশাপাশি দুই দেশের প্রতিনিধি দলও আলোচনা করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইউক্রেন যুদ্ধে ব্যবহারের জন্য উত্তর কোরিয়া থেকে অস্ত্র কিনতে ইচ্ছুক রাশিয়া। এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে চুক্তিও হতে পারে। এই সফরে যদি এমনটা হয় তাহলে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমারা নতুন করে পিয়ংইয়ংয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিবে।
রাশিয়ার পূর্বাঞ্চলে ভস্তোচনি কসমোড্রোমে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সংক্রান্ত বেশ কিছু ভিডিও প্রকাশ করেছে ক্রেমলিন। ওইসব ভিডিওতে দেখা যায়, দুই দেশের শীর্ষ নেতা উৎসাহের সঙ্গে করমর্দন করেন। বৈঠকের আগে মহাকাশ উৎক্ষেপণের স্থাপনাগুলো ঘুরে দেখেন দুই শীর্ষ নেতা।
এদিকে, কিমের মস্কো সফরের সময় দুটি স্বল্প পাল্লার ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে উত্তর কোরিয়া। জাপান সাগরে পড়া ক্ষেপণাস্ত্র দুটির বিষয় নিশ্চিত করেছে দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বৈঠকে সম্ভবত মস্কো উত্তর কোরিয়ার কাছ থেকে আর্টিলারি শেল ও অ্যান্টিট্যাংক মিসাইল চাইবে। অন্যদিকে, উন্নত স্যাটেলাইট ও পারমাণবিক চালিত সাবমেরিন প্রযুক্তি চাইবে পিয়ংইয়ং। বৈঠক শেষে বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকদের পুতিন বলেন, ‘আমরা তাড়াহুড়ো ছাড়াই সমস্ত বিষয় নিয়ে কথা বলব। সময় আছে।’
উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যমের তথ্য মতে, বুলেট প্রুফ ট্রেনে করে রাশিয়া গিয়েছেন। এই সফরে তার সঙ্গী হিসেবে রয়েছেন কোরিয়ান পিপলস আর্মি মার্শাল পাক জং চোন, যুদ্ধাস্ত্র বিভাগের পরিচালক জো চুন রইংসহ সামরিক বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
কিমের সঙ্গে হওয়া বৈঠকে রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সার্গেই শোইগু, পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ অংশ নিয়েছেন। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যমে প্রকাশিত ফুটেজে বিষয়টি পরিলক্ষিত হয়েছে।
পুতিন উত্তর কোরিয়ারর আনুষ্ঠানিক নাম উল্লেখ করে বলেন, ‘ডিপিআরকে নেতা রকেট প্রযুক্তিতে খুব আগ্রহ দেখাচ্ছেন। তারা মহাকাশে তাদের উপস্থিতি বাড়ানোর চেষ্টা করছে।’ আমন্ত্রণ দেওয়ায় পুতিনকে ধন্যবাদ দিয়ে কিম বলেন, ‘আপনার ব্যস্ত সময়সূচির মধ্যে আমাকে সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।’