যুদ্ধবিরতির মধ্যেই গাজায় ইসরায়েলি হামলা, নিহত ১৮
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর বিমান হামলায় গাজা উপত্যকায় অন্তত ১৮ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবারের (২৮ অক্টােবর) এই হামলা শুরু হয় দক্ষিণ রাফাহ এলাকায় গুলিবিনিময়ের ঘটনার পর, যেখানে একজন ইসরায়েলি সেনা আহত হয়েছিলেন।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর নির্দেশে এই ‘শক্তিশালী পাল্টা হামলা’ চালানো হয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় গত ১০ অক্টোবর যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছিল, তারপর এটাই সবচেয়ে বড় সহিংসতা। খবর আল জাজিরার।
হামাসের সামরিক শাখা আল-কাসসাম ব্রিগেড ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে জানায়, ইসরায়েলি সেনার দেহ ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া তারা স্থগিত করছে। সংগঠনটি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, ইসরায়েলের অব্যাহত হামলায় উদ্ধার কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে, যা অন্য জিম্মিদের মরদেহ পুনরুদ্ধারে বিলম্ব ঘটাবে।
ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স দাবি করেছেন, ‘যুদ্ধবিরতি এখনো কার্যকর আছে, যদিও ছোটখাটো সংঘর্ষ ঘটছে।’
গাজার চিকিৎসা সূত্র জানিয়েছে, হামলায় উত্তর গাজার সাবরা এলাকায় একটি আবাসিক ভবনে চারজন এবং দক্ষিণ খানের ইউনিসে পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এসব হামলায় অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন।
আল জাজিরার সাংবাদিক হানি মাহমুদ জানিয়েছেন, ‘আল-শিফা হাসপাতালের পেছনে একটি ক্ষেপণাস্ত্র পড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। আকাশে ড্রোন টহল দিচ্ছে।’
উদ্ধারকর্মী ইব্রাহিম আবু রিশ বলেন, ‘এটি স্পষ্ট যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন। আমরা ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধার করতে চেষ্টা করছি।’
নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘গাজায় শক্তিশালী হামলা চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।’ পরে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ বলেন, হামাসের হামলার জবাবে তারা ‘ভারী মূল্য’ দেবে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) জানিয়েছে, ইসরায়েল এই হামলার আগে ওয়াশিংটনকে অবহিত করেছিল।
গাজার সরকারি মিডিয়া অফিসের তথ্যমতে, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলি হামলায় ইতোমধ্যে ৯৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
হামাস জানিয়েছে, ‘গাজার ওপর অব্যাহত ইসরায়েলি হামলা ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় শার্ম আল শেখে স্বাক্ষরিত যুদ্ধবিরতি চুক্তির স্পষ্ট লঙ্ঘন।’
হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য সুহাইল আল-হিন্দি আল জাজিরাকে বলেন, ‘আমরা যুদ্ধবিরতি মেনে চলছি, কিন্তু ইসরায়েল মিথ্যা অভিযোগ করছে। ইসরায়েলি সেনাদের দেহ উদ্ধারে আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি, তবে ইসরায়েলি হামলাই এই প্রক্রিয়া বিলম্বিত করছে।’
আল-কাসসাম ব্রিগেড জানিয়েছে, মঙ্গলবার তারা আরও দুই ইসরায়েলি বন্দির দেহ উদ্ধার করেছে। তবে ইসরায়েল দাবি করেছে, হামাস যেই দেহ হস্তান্তর করেছে, তা দুই বছর আগে উদ্ধার করা এক সেনার, যুদ্ধবিরতিতে নিহতদের নয়।
নেতানিয়াহুর কট্টরপন্থি মন্ত্রীরা হামাসের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের দাবি তুলেছেন। জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইটামার বেন-গভির বলেন, ‘একমাত্র সমাধান—হামাসকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করা।’
ইউরোপীয় কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনের বিশ্লেষক মুহাম্মদ শহাদা বলেন, ‘নেতানিয়াহু যুদ্ধবিরতি শুরু থেকেই নানা অজুহাতে গাজায় গণহত্যা পুনরায় শুরু করতে চাচ্ছেন।’
শহাদা আরও বলেন, ‘ইসরায়েল এখন যুদ্ধবিরতির সীমা পরীক্ষা করছে—দেখছে কতদূর গেলে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিক্রিয়া জানাবে না।’
তবে ইসরায়েলি বিশ্লেষক ওরি গোল্ডবার্গ বলেন, ‘পুরো যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাবে—এটা মনে করার কারণ নেই। যুক্তরাষ্ট্র ও আঞ্চলিক অংশীদাররা এতে এতটাই বিনিয়োগ করেছে যে তারা তা হতে দেবে না।’
কাতার থেকে আল জাজিরার নিদা ইব্রাহিম জানিয়েছেন, ‘আমেরিকানরা এখন গাজার ঘটনাপ্রবাহে সরাসরি প্রভাব রাখছে। ইসরায়েল এমন সংঘর্ষের অজুহাত খুঁজছে যাতে তারা নিজেদের শর্তে যুদ্ধবিরতি বজায় রেখে হামলা চালাতে পারে।’

এনটিভি অনলাইন ডেস্ক