ইসরায়েলি কারাগারে মার্কিন কর্মীর ওপর ‘মানসিক নির্যাতনের’ অভিযোগ

গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করা গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা আটক করার পর ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার মার্কিন নাগরিক ডেভিড অ্যাডলার অভিযোগ করেছেন যে তাকে এবং অন্যান্য কর্মীদের “মানসিক নির্যাতন” ও “অপমানজনক আচরণের” মুখোমুখি হতে হয়েছে।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (৭ অক্টােবর) জর্ডানে ফেরত পাঠানো অ্যাডলার বলেন, ইসরায়েলি বাহিনী আন্তর্জাতিক জলসীমায় ফ্লোটিলাটি আটক করার পর তাদের দক্ষিণ ইসরায়েলের নেগেভ মরুভূমির একটি কারাগারে নিয়ে যায়। খবর আল জাজিরার।
অ্যাডলার আরও বলেন, “আমাদের অপহরণ করা হয়, কাপড় খুলে নেওয়া হয়, চোখ বেঁধে, হাত বেঁধে একটি পুলিশ ভ্যানে করে ইন্টার্নমেন্ট ক্যাম্পে পাঠানো হয়—খাবার, পানি কিংবা আইনি সহায়তা কিছুই দেওয়া হয়নি। পরবর্তী পাঁচ দিন ধরে আমাদের ওপর মানসিক নির্যাতন চালানো হয়।”
অ্যাডলার জানান, তাকে এবং আরেকজন ইহুদি কর্মীকে আলাদা করে এনে ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভিরের সঙ্গে জোরপূর্বক ছবি তুলতে বাধ্য করা হয়।
তিনি বলেন, “আমাদের হাঁটু গেড়ে বসানো হয়, তারপর দুই ইহুদি কর্মীকে কান ধরে টেনে নিয়ে যাওয়া হয় বেন-গভিরের সামনে, যেখানে আমাদের ইসরায়েলের পতাকার দিকে তাকিয়ে ছবি তুলতে বাধ্য করা হয়।”
প্রগ্রেসিভ ইন্টারন্যাশনালের সহ-সমন্বয়ক অ্যাডলার জানান, রাতে দাঙ্গা পুলিশ ও কুকুর নিয়ে কারাগারে হানা দিয়ে তাদের ভয় দেখানো হতো।
তিনি বলেন, “এটি ছিল পাঁচ দিনের এক দুঃস্বপ্ন—যেখানে আমাদের মৌলিক মানবাধিকার ধারাবাহিকভাবে লঙ্ঘন করা হয়েছে।”
ফ্লোটিলাটিতে ছিলেন গ্রেটা থুনবার্গসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ৪৭০ জন কর্মী ও ৪০টিরও বেশি নৌকা, যারা গাজার ওপর ইসরায়েলের অবরোধ ভেঙে খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছে দিতে চেয়েছিলেন।
ইসরায়েল আন্তর্জাতিক জলসীমায় ফ্লোটিলাটি আটক করে, যা মানবাধিকার সংগঠনগুলো “আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন” হিসেবে নিন্দা জানিয়েছে।
অ্যাডলার ছিলেন ফ্লোটিলার ২০ জন মার্কিন নাগরিকের একজন এবং সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্তদের মধ্যে একজন।
অ্যাডলারের দাবি, বন্দী মার্কিন নাগরিকদের পাশে দাঁড়ায়নি যুক্তরাষ্ট্র।
তিনি বলেন, “মার্কিন কনসুল জেনারেল আমাদের বলেছিলেন, ‘আমরা তোমাদের বেবিসিটার নই। তোমাদের খাবার, পানি, টাকা, ফোন—কিছুই থাকবে না। তোমাদের সরাসরি বিমানবন্দরে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।’”
ইসরায়েলে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হাকাবি অ্যাডলারকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করে বলেন, তিনি “হামাসের এক আত্মকেন্দ্রিক এজেন্ট।”
মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, ইসরায়েলের এই আচরণ আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের চরম অবমাননা।

অ্যাডলার বলেন, “আমরা যে নির্যাতনের শিকার হয়েছি, তা ফিলিস্তিনিদের প্রতিদিনের বাস্তবতার তুলনায় কিছুই নয়।”
ইসরায়েল বর্তমানে হাজারো ফিলিস্তিনি বন্দীকে বিনা অভিযোগে কারাগারে আটকে রেখেছে। জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো জানিয়েছে, সেখানে নিয়মিত শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, ক্ষুধার্ত রাখা, এমনকি যৌন সহিংসতাও ঘটে।
বর্তমানে ইসরায়েলি কারাগারে রয়েছেন এক মার্কিন কিশোর মোহাম্মদ ইব্রাহিম, যাকে ফেব্রুয়ারিতে পশ্চিম তীর থেকে আটক করা হয়েছে। তার পরিবার জানিয়েছে, আটক হওয়ার পর থেকে ছেলেটির ওজনের এক-চতুর্থাংশের বেশি কমে গেছে।